প্রতিদিনের ভোগান্তি: কেন দেরি হচ্ছে মেট্রো?
রোজ সকালে অফিসযাত্রীদের জন্য মেট্রো যেন দুঃস্বপ্ন। ব্লু লাইনে রেক ঘোরাতে লাগছে অতিরিক্ত সময়, ফলে প্রতিদিনই ট্রেন দেরিতে চলছে। সূত্রের খবর, আগের নিয়মে রেকের দুই প্রান্তে থাকা লোকো পাইলটই ট্রেন চালাতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে গার্ড হিসেবে যিনি থাকছেন, তিনি সহকারী লোকো পাইলট হলেও সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেন চালাচ্ছেন না।
ফলে রিভার্সেবল পয়েন্টে আট কোচের গাড়ির মধ্যে লাইন বদলের সময় লোকো পাইলটকেই উভয় প্রান্তে গিয়ে চালাতে হচ্ছে। এই অতিরিক্ত সময়ের জন্যই যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
কর্মী সংকট: কতটা গুরুতর পরিস্থিতি?
মোটরম্যানের অভাব
- বর্তমানে ২৪৭টি মোটরম্যানের পদ খালি।
- দক্ষ মোটরম্যানের অভাবে বারবার শিডিউল ভেঙে পড়ছে।
ট্র্যাকম্যানের অভাব
- ব্লু লাইনে দরকার ১০৪ জন ট্র্যাকম্যান, আছেন মাত্র ৮৪ জন।
- এই কর্মীদের দিয়েই সব সেকশনের কাজ চালাতে হচ্ছে—অরেঞ্জ, গ্রিন, ইয়েলো, পার্পেল লাইনেও।
অপারেটিং বিভাগে সঙ্কট
- প্রয়োজন ১৪০০ কর্মী, বাস্তবে আছেন মাত্র ৭৫০ জন।
- ফলে কাজের চাপ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যমান কর্মীদের উপর।
২০১২ সালের পর থেকে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ
মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজিত ঘোষ জানিয়েছেন,
“২০১২ সালের পর থেকে সরাসরি মেট্রো রেলে মোটরম্যান নিয়োগ হচ্ছে না। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে পাঠানো সহকারী লোকো পাইলটদের দিয়েই চালাতে হচ্ছে মেট্রো। কিন্তু তাঁদের অনেকে সুড়ঙ্গ ট্রেন চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন।”
ফলে নতুন নিয়োগ না হওয়ায় দক্ষ কর্মীর অভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
নতুন লাইন বাড়ছে, কর্মী বাড়ছে না
প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন,
“এত নতুন লাইন চালু হচ্ছে, যাত্রীদের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মী ও আধিকারিক নিয়োগ করা হচ্ছে না। যারা আছেন তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মেট্রো।”
যাত্রীদের দুর্ভোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?
- প্রতিদিন অফিস টাইমে দেরি।
- ট্রেন কম থাকায় চড়ছে যাত্রীদের ভিড়।
- রেক ঘোরাতে অতিরিক্ত সময় লাগছে।
- যাত্রীদের অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ।
সমাধানের পথ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে—
- দ্রুত সরাসরি মোটরম্যান নিয়োগ করতে হবে।
- ব্লু লাইন সহ নতুন লাইনগুলির জন্য আলাদা করে ট্র্যাকম্যান ও অপারেটিং কর্মী নিয়োগ জরুরি।
- সহকারী লোকো পাইলটদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে সুড়ঙ্গ রুটে ট্রেন চালানোর জন্য।
- কর্মীদের উপর চাপ কমাতে নতুন পদ সৃষ্টি ও দ্রুত নিয়োগ দরকার।
কলকাতার লাইফলাইন বলা হয় মেট্রোকে। অথচ প্রতিদিনের দেরি, কর্মী সংকট ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি এখন নিয়মিত খবরের শিরোনাম। দ্রুত নিয়োগ ও আধুনিক অপারেশনাল ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান না হলে, শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ ব্যবস্থা আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরের কাছে বাড়ি? হার্ট ফেলিয়র, স্ট্রোক-সহ একাধিক ঝুঁকি, জানাল গবেষণা