ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারায় স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং বিচারপতি এ.জি. মাসিহ-র বেঞ্চ এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করে। তবে পুরো আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। প্রায় ৬৫টি জনস্বার্থ মামলার শুনানির প্রেক্ষিতেই এই অন্তর্বর্তী রায় আসে।
কী কী স্থগিত রইল
- জেলা কালেক্টরের ক্ষমতা (ধারা ৩সি):
আইন অনুযায়ী জেলা কালেক্টর বা মনোনীত আধিকারিক ওয়াকফ সম্পত্তি আসলে সরকারি জমি কি না তা খতিয়ে দেখার ক্ষমতা পেতেন। তদন্ত শুরু হলেই সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি আর ওয়াকফ হিসেবে গণ্য হতো না। আদালত এই বিধান স্থগিত করেছে। এখন তদন্ত চলাকালীন সম্পত্তির ওয়াকফ মর্যাদা বহাল থাকবে। তবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—বিতর্কিত জমিতে নতুন কোনও তৃতীয় পক্ষের অধিকার তৈরি করা যাবে না, যতক্ষণ না ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়। - অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি:
সংশোধিত আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য রাখার বিধান ছিল। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ২২ সদস্যের কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ৪ জন এবং ১১ সদস্যের রাজ্য বোর্ডে সর্বোচ্চ ৩ জন অ-মুসলিম থাকতে পারবেন। - ৫ বছরের ইসলাম চর্চার শর্ত:
আইনে বলা হয়েছিল, অন্তত ৫ বছর ইসলাম চর্চা করলে তবেই কেউ ওয়াকফ গঠন করতে পারবেন। আদালত এই ধারা স্থগিত করেছে। তবে শর্ত রেখেছে—সরকার নিয়ম প্রণয়ন করে কীভাবে এই পাঁচ বছরের প্রমাণ নির্ধারণ হবে তা স্পষ্ট না করা পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
কী স্থগিত হয়নি
- ‘Waqf by use’ বাতিল: দীর্ঘদিনের এই প্রথা অনুযায়ী কোনও জমি বহু বছর ধরে মুসলিম ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজে ব্যবহৃত হলে সেটিকে ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো। সরকার দাবি করে এই প্রথা সরকারি জমি দখলের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। আদালত আপাতত এই ধারা স্থগিত করেনি।
- Limitation Act প্রযোজ্যতা: ১৯৯৫ সালের আইনে ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় সময়সীমা প্রযোজ্য ছিল না। নতুন আইনে সেই ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। আদালত এটিও বহাল রেখেছে, জানিয়ে যে এর ফলে বৈষম্য দূর হলো।
পরবর্তী পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই পর্যবেক্ষণগুলি কেবল অন্তর্বর্তী নির্দেশের জন্য। মামলার চূড়ান্ত শুনানিতে আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিস্তারিত যুক্তি গ্রহণ করা হবে।
প্রেক্ষাপট
এপ্রিল ২০২৫-এ সংসদে পাশ হওয়া এই সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, মহুয়া মৈত্র, মনোজ ঝা-সহ একাধিক সাংসদ, দল ও সংস্থা মামলা করে। তাঁদের অভিযোগ, আইনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে, যা সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।