আমরা সকলেই মুখরোচক ভাজাভুজি খাবার খেতে অভ্যস্ত। আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষই ফাস্ট ফুড খাবারে আসক্ত। সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মাত্র ৪ দিন ফ্যাট আছে এমন মুখরোচক ভাজাভুজি খাবার খেলেই মস্তিষ্কর কার্যকারিতা নষ্ট হয়। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণা চালান।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফাস্ট ফুড খেলে ডায়াবেটিস বা স্থুলতার সমস্যা হওয়ার অনেক আগেই মস্তিষ্কর কার্যকারিতা নষ্ট হতে শুরু করে। এসব ভাজাভুজি খাবারে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে থাকা সিসিকে ইন্টারনিউরন নামক বিশেষ কোষ সক্রিয় হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। মস্তিষ্কের কোষ কীভাবে এনার্জি ব্যবহার করবে তা নিয়ন্ত্রণ করে পিকেএম২ প্রোটিন। এই প্রোটিন এই সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালানো হয়। নিউরন নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র।
অন্যদিকে, আমেরিকান জার্নাল অফ কিডনি ডিজিজ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি পরিমাণে আল্ট্রা প্রসেস করা খাবার খেলে ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ২৪ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স এমন ১৪ হাজার ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালানো হয়। ৫ হাজার ব্যক্তির কেক, পেস্ট্রি, পাউরুটি, কৃত্রিম শর্করা দেওয়া ঠান্ডা পানীয়, প্যাকেটের নোনতা খাবার, প্রসেস করা মাংসর মতো আল্ট্রা প্রসেস করা খাবার খেয়ে কিডনির অসুখ হয়েছে।
আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন জীবনযাপন করতে অনেকেই কৃত্রিম শর্করা দেওয়া খাবার খান। চিনি এড়াতে কৃত্রিম শর্করা খেয়ে মানসিক শান্তি হয়ত পান কিন্তু অন্য বড়ো বিপদ লুকিয়ে আছে কৃত্রিম শর্করা ব্যবহারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিমাণে লো অথবা নো ক্যালরি আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বা কৃত্রিম শর্করা দেওয়া খাবার খেলে মস্তিষ্ক বুড়ো হতে শুরু করে বয়সের আগেই। Neurology journal এ প্রকাশিত হয়েছে ‘ Association Between Consumption of Low- and No- Calorie Artificial Sweetners and Cognitive Decline’ নামক গবেষণা রিপোর্ট।
৮ বছরের বেশি সময় ধরে ১২,৭০০ জন ব্রাজিলের মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৩৫ বছর বা তার বেশি। ইয়োগার্ট, মিষ্টি ঠান্ডা পানীয়, ডায়েট সোডা, লো ক্যালরি মিষ্টি জাতীয় খাবারে অংশগ্রহণকারীরা aspartame, saccharin, acesulfame-K, erythritol, xylitol, sorbitol, tagatose নামক কৃত্রিম শর্করা মিশিয়ে খেতেন। কোন রকমের কৃত্রিম শর্করা খান তার ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের আলাদা আলাদা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ৬০ বছরের কমবয়সি অংশগ্রহণকারী যাঁরা aspartame, saccharin, acesulfame-K, erythritol, xylitol, sorbitol নামক কৃত্রিম শর্করা দেওয়া খাবার খেয়েছেন তাঁদের ৬২% বেশি পরিমাণে স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। কথা বলায় সমস্যা হচ্ছে। সার্বিক ভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বিঘ্ন ঘটে। এঁদের মস্তিষ্ক এসব কৃত্রিম শর্করা খেয়ে ১.৬ বছর বেশি বুড়ো হয়ে গেছে। সমস্যা বেশি হয়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।