শহর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পুজোর অন্যতম হল হাজরা পার্ক দুর্গোৎসবের পুজো। ১৯৪২ সালে এই পুজোর সূচনা হয়। দলিত, প্রান্তিক মানুষদের পুজোয় অধিকার নিশ্চিত করতে কলকাতা পুর নিগম (কেএমসি)-র মেয়র সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পুর নিগমের কর্মীদের নিয়ে শুরু হয় এই উদ্যোগ। প্রথমে পদ্মপুকুরে হলেও পরে হাজরা মোড়ের যতীন দাস পার্কের মাঠে পুজো শুরু হয়। ২০১৬ সাল থেকে ‘হাজরা পার্ক দুর্গোৎসব’ নামে পুজোটি পরিচিতি পায়। ৮৩তম বছরে তাদের বিষয় ভাবনা হল ‘দৃষ্টিকোণ’। শিল্পী বিমান সাহা।
পুজো কমিটির কর্তা সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, রঙের বহুমাত্রিকতাকে আমরা তুলে ধরতে চাই। মণ্ডপ, প্রতিমার পাশাপাশি পুরো ভাবনায় থাকছে রঙের ভাষ্য। রঙ শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যকে নির্দেশ করে না। রঙ হল এক অনুভব, এক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রতিটি অনুভূতির নিজস্ব রঙ আছে। ভালোবাসা, প্রতিবাদ, সাহস ও আশার নিজস্ব রঙ আছে। প্রতিমার গায়ে যেমন লেগে থাকে তুলির শেষ টান তেমনই জীবনের প্রতিটি অধ্যায় লেগে থাকে এক একটা রঙের গল্প। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রঙ, এসব রঙ শুধু চোখের আরাম নয়, আমাদের মনের আবেগ, স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার রঙিন ছোঁয়া থাকে। শিল্পীর কাছে রঙ হল আত্মপ্রকাশের গভীর মাধ্যম, নিজস্ব ভাষ্য। প্রতিটি রঙের ব্যবহারে শিল্পীর মনের কথা, দর্শন, অনুভব ধরা পড়ে।’

থিম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সায়নদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরাণ অনুযায়ী, দেবী দুর্গার গায়ের রঙ অতসী ফুলের মতো। বিভিন্ন জায়গায় অতসী ফুলের রঙ আলাদা। কোথাও তা সোনালী কোথাও আবার নীল। ফলে দেবীর মূর্তির রঙ কোথাও সোনালী কোথাও আবার নীলাভ। উপনিষদে দেবীকে বলা হয়েছে, ‘লোহিতাক্ষ্যামা শুক্তপর্ণাম’। অর্থাৎ তিনি রক্তিম, তিনি শুভ্র আবার তিনিই কৃষ্ণ। তিনি জল, তিনি অগ্নি আবার তিনিই পৃথিবী। রঙের বহুরূপই আমাদের দৃষ্টিকোণকে বদলে দেয়। পুজোয় এই বহুমাত্রিকতাকে তুলে ধরতে চাই।’