লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবিতে আন্দোলন এবার ভয়াবহ হিংসায় রূপ নিল। বুধবার প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার বিক্ষোভকারী লেহ-র রাস্তায় নেমে সরকারী ভবন ভাঙচুর করে, বিজেপির অফিসে আগুন লাগায় এবং একাধিক গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সুরক্ষা বাহিনী টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ এবং শেষ পর্যন্ত গুলি চালায়। এতে ৪ জনের মৃত্যু হয়, ৭০ জনের বেশি আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন সিআরপিএফ জওয়ান এবং ১৫ জন লাদাখ পুলিশকর্মী। গুরুতর আহত এক কিশোরীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
লাদাখ পুলিশের ডিজি ডঃ এস ডি সিংহ জামওয়াল জানিয়েছেন, এই হিংসার মূল উস্কানিদাতা হিসেবে জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুককে গ্রেফতার করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (NSA)। তাঁর অভিযোগ, ওয়াংচুকের অনশন মঞ্চকে ব্যবহার করা হয়েছে হিংসা উসকানি দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। জামওয়ালের দাবি, ওয়াংচুক আগেও “আরব বসন্ত”, “নেপাল” ও “বাংলাদেশ”-এর প্রসঙ্গ টেনে আন্দোলনকে অশান্ত করার চেষ্টা করেছেন।
পাকিস্তান যোগের অভিযোগ
ডিজি জামওয়াল বলেন, ওয়াংচুকের সঙ্গে পাকিস্তান সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তিনি বলেন, “সম্প্রতি এক পাকিস্তানি পিআইও-কে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে ওয়াংচুকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত এবং পাকিস্তানে তথ্য পাঠাত। ওয়াংচুক পাকিস্তানে ‘Dawn’ পত্রিকার এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশেও সফর করেছেন। তদন্তে দেখা হচ্ছে এফসিআরএ আইনের অধীনে তাঁর বিদেশি তহবিল আসছে কি না।”
পুলিশের দাবি, পরিকল্পনা এবং সমন্বয় আগে থেকেই করা হয়েছিল। অথচ কেন্দ্র ইতিমধ্যেই লেহ এপেক্স বডি ও কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (KDA)-এর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিল। এই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে বলেই ওয়াংচুক আন্দোলনকে “সাবোটাজ” করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পুলিশের।
অশান্তির দিন
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দিনেই ৩২ জন গুরুতর আহত হন, তাঁদের মধ্যে ১৭ জন সিআরপিএফ এবং ১৫ জন লাদাখ পুলিশের কর্মী। পরের দিন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০-৮০ জন। সমসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক আহত হন, যাঁদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চার মহিলা পুলিশকর্মী যে ভবনে ছিলেন, সেটি বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
ডিজি জামওয়াল আরও বলেন,“সিআরপিএফ জওয়ানদের নৃশংসভাবে মারধর করা হয়েছে। একজনের মেরুদণ্ডে গুরুতর চোট লেগেছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল বলেই আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানো হয়।”
গ্রেফতারি অভিযান
এখন পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে আন্দোলনের “মূল রিং লিডার”-রাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোনম ওয়াংচুককে এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ডিজি জামওয়াল জানান, গোয়েন্দা সংস্থা আগে থেকেই অশান্তির আশঙ্কা করেছিল। সেই অনুযায়ী পুলিশি মোতায়েন করা হয়েছিল। তবুও আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়নি।
লাদাখে রাজনৈতিক দাবিদাওয়া ঘিরে আন্দোলন যে হিংসাত্মক রূপ নেবে, তা কেন্দ্র বা রাজ্য প্রশাসন আঁচ করতে পারেনি। সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারি ও পাকিস্তান যোগের অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলল। এখন নজর থাকছে দিল্লির আলোচনার ফলাফলের দিকে, যা হয়তো লাদাখের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করবে।
আরও পড়ুন: মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন BSNL-এর ‘স্বদেশি’ 4G স্ট্যাক, ডিজিটাল ইন্ডিয়া পথে বড় পদক্ষেপ