কলকাতায় শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা কমলেও, নাবালকদের অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB) ‘Crime in India 2023’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে যেখানে মাত্র ৯ জন নাবালককে অপরাধে যুক্ত পাওয়া গিয়েছিল, ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫-তে — প্রায় ১৩ গুণ বৃদ্ধি।
অন্যদিকে, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ২০২২ সালের ৬০২ থেকে ২০২৩ সালে কমে ২৯৭-এ নেমেছে। কিন্তু সেই সাফল্যের আড়ালে রয়েছে নাবালকদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার অস্বস্তিকর বাস্তবতা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ধৃত নাবালকদের মধ্যে
- ৩ জন খুনে,
- ৪ জন খুনের চেষ্টায়,
- ২ জন অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনায়,
- ১ জন দাঙ্গায়, এবং
- ১৪ জন বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে জড়িত ছিল।
তাছাড়া, ৪ জন নাবালক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে, যা ২০২৩ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ৬৫%। এসব অপরাধ POCSO আইন-এর আওতায় এসেছে।
২০২৩ সালে POCSO আইনে ১৯২টি মামলা এবং শিশুদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধে ২৯৭টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
একজন গোয়েন্দা বিভাগের একজন সিনিয়ার আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ কিছুটা কমেছে কারণ SOP (Standard Operating Procedure) কঠোরভাবে মানা হয়েছে। বিশেষত, নিখোঁজ নাবালিকা সংক্রান্ত অপহরণের অভিযোগুলো দ্রুত নথিভুক্ত করার নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে, যা আগের বছরগুলোতে সবসময় করা হতো না।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯৫টি নাবালক অপহরণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১টি মুক্তিপণের জন্য অপহরণ এবং ১০টি নাবালিকা ক্রয়ের ঘটনা।
এছাড়া ৪টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে শিশুবিবাহ নিষিদ্ধ আইন অনুযায়ী, নাবালিকা মেয়েদের জোরপূর্বক বিবাহের অভিযোগে।
২০২৩ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জন মহিলা।
কলকাতা পুলিশ মোট ৩১৬টি তদন্ত সম্পন্ন করেছে, তবে ৫৯৭টি মামলা (পুরনো কেসসহ) এখনও তদন্তাধীন।
তদন্ত সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের সাফল্য প্রশংসনীয় — ৯৯.৪% চার্জশিট সম্পন্ন হয়েছে, যদিও ৬৫.৪% মামলা এখনও বিচারাধীন, যা অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক বেশি। তুলনামূলকভাবে কানপুরে এই হার ১৬%, বেঙ্গালুরুতে ১৭.৭%, কোচিতে ১৮%, এবং জয়পুরে ১৯.১%।তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় বিচারব্যবস্থার ধীরগতি। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত ২,৭৯০টি মামলা এখনও বিচারাধীন, ২০২৩ সালে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৩১৪টি মামলা। সব মিলিয়ে এখন মোট ৩,১০৪টি মামলা বিচারাধীন, কিন্তু রায় হয়েছে মাত্র ৩৪টিতে, যার মধ্যে ১৫টি মামলা ২০২৩ সালের।