রাজ্যে শুরু হয়েছে ব্যাটারি চালিত যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন অভিযান। দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলা টোটো ও ই-রিকশার বহরে শৃঙ্খলা আনতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। তবে প্রথম দুই দিনে রাজ্যজুড়ে মাত্র ৯৫০টি ব্যাটারি চালিত যানবাহন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ৯৫০ গাড়ির মধ্যে প্রায় ৭৯০টি টোটো এবং ১৬০টি ই-রিকশা। যদিও রাজ্য জুড়ে আনুমানিক ১০ লক্ষেরও বেশি টোটো চলছে, যার বেশির ভাগ এখনও আইনি স্বীকৃতি ছাড়া রাস্তায় চলছে।
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “প্রথমদিকে সাড়া কিছুটা মন্দা। তবে দীপাবলির পর আমরা ভালো প্রতিক্রিয়া আশা করছি। দীপাবলির সময় নতুন গাড়ি কেনা হয় বেশি, তাই তখন রেজিস্ট্রেশনও বাড়বে বলে মনে করছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী বছরের শুরুতেই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বড় অংশ শেষ করা।”
টোটো ও ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশনে পার্থক্য
ই-রিকশার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘Vahan’ পোর্টালের মাধ্যমে স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। কিন্তু টোটো গাড়িগুলির ক্ষেত্রে বর্তমানে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হচ্ছে, কারণ অনেক টোটো এখনও Motor Vehicles Act-এর নির্ধারিত প্রযুক্তিগত মানদণ্ডে (technical specifications) উত্তীর্ণ নয়।
ফলে অনেক টোটো মালিককেই নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করতে সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টোটোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ
গত এক দশকে রাজ্যের শহর ও মফস্সলে টোটোর দখল ক্রমশ বেড়েছে।
জেলা শহর থেকে কলকাতার উপকণ্ঠ পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র টোটো এখন প্রধান পরিবহণ মাধ্যম। তবে এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ট্রাফিক জট, দুর্ঘটনা, ও যান চলাচলের বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সরকারি এক আধিকারিক বলেন, “গ্রাম ও শহরতলির যুবকরা স্কুল, কোচিং বা কর্মস্থলে যেতে সস্তা ও নির্ভরযোগ্য পরিবহণ চান। টোটো সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে। কিন্তু নিয়মের বাইরে থেকে চললে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও বিমা সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হয়।”
নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবতার ভারসাম্য
পরিবহণ দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন মূল লক্ষ্য হল নিয়ম প্রয়োগের পাশাপাশি চালকদের সুবিধাও বজায় রাখা। রেজিস্ট্রেশনের পর টোটোদের চলাচল সীমিত থাকবে জেলা ও শহরাঞ্চলের রাস্তায়, হাইওয়ে বা রাজ্য সড়কে নয়।
এক আধিকারিকের কথায়, “আমাদের চ্যালেঞ্জ হল আইন প্রয়োগের সঙ্গে মানবিক দিকের ভারসাম্য রক্ষা করা। টোটো আজ রাজ্যের গতিশীলতার অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু আইন না মানলে দুর্ঘটনা ও দাবির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।”
আরও পড়ুন: ২০০২ বনাম ২০২৫! ৭ জেলার ভোটার তালিকায় ৫১% থেকে ৬৫% মিল, কোথায় সবচেয়ে কম জানেন?