অরূপ চক্রবর্তী, গুয়াহাটি: অসমের জনপ্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গের রহস্যময় মৃত্যু ঘিরে এখনও স্তব্ধ রাজ্যবাসী। মৃত্যুর এক মাস পরও প্রশ্নের উত্তর মেলেনি— কীভাবে, কেন, আর কারা জড়িত এই ঘটনায়? এই রহস্যের সমাধান খুঁজতেই প্রায় এক সপ্তাহের বিদেশ সফর শেষে অসম পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে ফিরে এসেছে।
এসআইটি প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মুন্না প্রসাদ গুপ্তা এবং সহকারী তদন্তকারী তরুণ গোয়েল-এর নেতৃত্বে দলটি সিঙ্গাপুরে তদন্ত চালায়। শুক্রবার গুয়াহাটির সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা জানান, “সিঙ্গাপুর সফরটি তদন্তের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ নথি, সাক্ষ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, যা তদন্তকে আরও সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
গুপ্তা জানান, “সিঙ্গাপুর পুলিশ জুবিন গার্গের মৃত্যুর পর সম্পন্ন হওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভারতের উচ্চায়ুক্তের মাধ্যমে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই রিপোর্ট আমাদের তদন্তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও জানান, তদন্ত দল সিঙ্গাপুর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে এবং সেখানকার আইনি কাঠামোর মধ্যেই প্রয়োজনীয় স্থান পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে। সিঙ্গাপুর সরকার ভারতের অনুরোধে তদন্তে আইনি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে।
গুপ্তা জানান, সিঙ্গাপুর পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে জুবিনের অবস্থানকালীন হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ আগামী ১০ দিনের মধ্যেই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিক ওয়াজিদ আহমেদ-সহ কয়েকজনের সাক্ষ্যও রেকর্ড করা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারতের তদন্তদলের কাছে পাঠানো হবে।
৭০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ, স্ত্রী গরিমা শইকিয়ার বিবৃতিও রেকর্ড
তদন্তপ্রধান জানান, এখন পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আছেন শিল্পীর স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গার্গ। এছাড়া ইয়টের নাবিক ও চালকের বিবৃতিও সিঙ্গাপুর পুলিশ গ্রহণ করবে এবং তা ভারতের হাতে তুলে দেবে।
তদন্তে উঠে এসেছে জুবিন গার্গের দুই নিরাপত্তারক্ষীর আর্থিক অনিয়মের তথ্য। তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বৈধ আয়ের তুলনায় বিপুল অর্থের হদিস মেলেছে। গুপ্তা বলেন, “এটি দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় গুরুতর অপরাধ। মুখ্যমন্ত্রীর ভিজিল্যান্স সেল এই ঘটনায় পৃথক মামলা দায়ের করেছে।”
সহকারী তদন্তকারী তরুণ গোয়েল বলেন, “বিদেশে তদন্ত পরিচালনা করা সহজ নয়, তবে সিঙ্গাপুর পুলিশ যে ভাবে সহযোগিতা করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন থেকে নথি সংগ্রহ পর্যন্ত তারা আমাদের পাশে থেকেছে।”
সিঙ্গাপুর পুলিশ জানিয়েছে, তারা ৯০ দিনের মধ্যে নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদন করনার্স অফিসে জমা দেবে, এরপর প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গুপ্তা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটাই — সত্য উদ্ঘাটন। কোনওরকম চাপ বা আপসের প্রশ্নই নেই। প্রমাণের ভিত্তিতেই জুবিন গার্গের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য একদিন প্রকাশ পাবে।”
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

