ইস্টবেঙ্গল এফসি: ৪ (কেভিন সিবিলে, বিপিন সিং ২, হিরোশি ইবুসুকি) চেন্নাইয়িন এফসি: ও
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ০ ডেম্পো এসসি: ০
বাম্বোলিম (গোয়া) ও দিল্লি: নাওরেম মহেশ সিং যেন মাঠে জাদুকরের ভূমিকায়। তার নিখুঁত পাসিং আর দারুণ সৃজনশীলতায় ভর করে ইস্টবেঙ্গল এফসি মঙ্গলবার বাম্বোলিমের জিসিএম স্টেডিয়ামে চেন্নাইয়িন এফসিকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিল এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬ আসরের গ্রুপ পর্বে। এই জয়ে লাল-হলুদ ব্রিগেড টুর্নামেন্টে প্রথম জয় পেল, আর টানা দ্বিতীয় পরাজয়ে বিদায় নিল চেন্নাইয়িন।
আগের ম্যাচে দলের হয়ে প্রথম গোল করা মহেশ এই ম্যাচে হয়ে উঠলেন দলের ‘প্লেমেকার’। দুটি অসাধারণ অ্যাসিস্ট ও একটি গুরুত্বপূর্ণ পাস দিয়ে তিনি প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ছিন্নভিন্ন করে দেন।
ম্যাচের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ডিফেন্ডার কেভিন সিবিলে প্রথম গোলটি করেন। এর পর মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে বিপিন সিং দুটি গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন, যা কার্যত চেন্নাইয়িনের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা শেষ করে দেয়।
শেষ মুহূর্তে জাপানি ফরোয়ার্ড হিরোশি ইবুসুকি পেনাল্টি থেকে গোল করে স্কোরলাইন ৪-০ করেন, যা ম্যাচের পরিসমাপ্তি টানে একতরফা আধিপত্যে।
ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল কোচ দলের পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “মহেশ আজ সত্যিই অসাধারণ ছিল। তার পাসিং আর দৃষ্টিশক্তি পুরো ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে।”
এই জয়ের ফলে ইস্টবেঙ্গল এখনও শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকল। অন্য দিকে চেন্নাইয়িন এফসির সুপার কাপ অভিযান শেষ হল হতাশার মধ্য দিয়ে।
কোচের পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট ডেম্পোর
দিল্লির পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে স্যাঁতসেঁতে এক সন্ধ্যায় মঙ্গলবার ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবের কোচ সমীর নায়ক বারবার একটা কথাই বলছিলেন, ‘সেকেন্ড বলস!’ তবে তাঁর গলায় ছিল না কোনো হতাশা বা রাগের সুর, বরং দৃঢ়তা ও পরিকল্পনার ইঙ্গিত। মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন স্থিরচিত্তে, কারণ ভারতীয় এই কোচ জানতেন তিনি কী করছেন।

মোহনবাগানের আক্রমণ রোখার চেষ্টা ডেম্পোর। ছবি সৌজন্যে AIFF Media।
তাঁর ছেলেরা মাঠে সেই নির্দেশই নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করেছে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-২ ড্রয়ের পর এবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকেও রুখে দিল তারা গোলশূন্য ড্র করে।
প্রথমার্ধে মাত্র দু’বার নিজেদের রক্ষণভাগে ‘সেকেন্ড বল’ হারায় ডেম্পো — ২৫ ও ৩৫ মিনিটে। সেই সময় মোহনবাগানের জেসন কামিংসের একটি শট পোস্টের বাইরে যায় এবং অপর সুযোগে গোলরক্ষক ডেম্পোর আশিস সিবি অসাধারণ সেভ করেন।
এর পরের সময়টুকু ছিল মূলত ডেম্পোর রক্ষণাত্মক ছক প্রয়োগের প্রদর্শনী। আটটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামা মোহনবাগান দল একাধিকবার আক্রমণ সাজালেও গোলের দেখা পায়নি।
শেষ পর্যন্ত সমীর নায়কের পরিকল্পনা ও খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলাবদ্ধ পারফরম্যান্সই ডেম্পোকে গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট এনে দেয়, আর ম্যাচ শেষে করতালিতে ভরে ওঠে স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
এখন নজর কলকাতা ডার্বির দিকে
দুই রাউন্ড শেষে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমান পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে। ২টি করে ম্যাচ খেলে ১টি জয় এবং ১টি ড্র-এর মাধ্যমে তারা ৪টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে লাল-হলুদ। ফলে ৩১ অক্টোবরের কলকাতা ডার্বিই নির্ধারণ করবে কোন দল যাবে সুপার কাপের সেমিফাইনালে। যে দল জিতবে সেই দলই যাবে সেমিতে। আর যদি সেই ম্যাচ ড্র হয়, তা হলে ইস্টবেঙ্গলই যাবে সেমিতে।
তবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ ড্র হলে ডেম্পোরও সুযোগ আছে সেমিফাইনালে যাওয়ার। একটাই শর্ত, চেন্নাইয়িনের বিপক্ষে পাঁচ গোলে জিততে হবে কোনো গোল না খেয়ে।
আরও পড়ুন
এআইএফএফ সুপার কাপ ২০২৫-২৬: ম্যাকলারেনের জোড়া গোলে মোহনবাগান জয়ী, পয়েন্ট খোয়াল ইস্টবেঙ্গল


