জমি ও বাড়ি কেনাবেচার পর মিউটেশন (Mutation) করানোর ঝক্কি থেকে অবশেষে মুক্তি মিলতে চলেছে রাজ্যবাসীর। এবার থেকে আর আলাদা করে আবেদন না করেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে পুর-মিউটেশন প্রক্রিয়া। রাজ্য সরকার এই ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে, যাতে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানি কমে এবং পুরসভাগুলির রাজস্ব আদায় আরও স্বচ্ছ হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, অর্থ দফতরের ডিরেক্টরেট অফ রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প ডিউটি, এবং রাজ্যের সব পুরসভা একযোগে কাজ শুরু করেছে এই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য।
এর অংশ হিসেবে কলকাতা পুরসভা (KMC) এবং নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (NKDA)-র পোর্টাল ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রেশন ডিরেক্টরেটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে সম্পত্তি কেনাবেচার সময়েই রেজিস্ট্রেশনের নথির সঙ্গে পুরসভার রেকর্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে।
নতুন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য:
- সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের সময়েই পুর-মিউটেশন সম্পন্ন হবে।
- ক্রেতাকে আলাদা করে পুরসভায় গিয়ে আবেদন করতে হবে না।
- দলিল, সম্পত্তিকরের রসিদ, পরিচয়পত্র ইত্যাদি আলাদা করে জমা দেওয়ার প্রয়োজন থাকবে না।
- পুরসভার নথিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন মালিকের নাম যুক্ত হবে।
- পুরসভার তথ্যভান্ডারে পুরনো মালিকের নাম থেকে যাওয়ার সমস্যাও মিটবে।
বর্তমানে রেজিস্ট্রেশনের পর পুর-মিউটেশনের জন্য আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভায়, যা অনেক সময় জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই আবেদন না করায় পুরসভার নথিতে পুরনো মালিকের নাম থেকেই যায়, ফলে রাজস্ব আদায়ে সমস্যা তৈরি হয় এবং নতুন মালিককে আগের করের দায় নিতে হয়।
প্রশাসনিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দুই বছরে রাজ্যের পুরসভাগুলিতে ৩,৫২,৬৩৫টি পুর-মিউটেশন অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের মতে, এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল। তাই এবার স্বয়ংক্রিয় মিউটেশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভূমি দফতরের আওতায় জমি রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় নাম পরিবর্তনের (Auto Mutation) ব্যবস্থা আগেই চালু হয়েছে। এবার সেই সুবিধাই আসছে পুর-মিউটেশন প্রক্রিয়াতেও।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়,“অনেকেই মনে করেন মিউটেশন করানো ঝামেলার কাজ। কিন্তু আমরা যে নতুন পদ্ধতি চালু করতে চলেছি, তা কার্যকর হয়ে গেলে মিউটেশন হবে অনেক সহজ। এতে প্রশাসনিক দিক থেকেও আমাদের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।”বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ কার্যকর হলে নাগরিক সেবার মান উন্নত হবে এবং রাজ্যের ই-গভর্নেন্স (e-Governance) ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও স্বচ্ছ হবে।


