বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ল মহাগঠবন্ধন। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে নেমে রীতিমতো হতাশাজনক ফল করেছে আরজেডি (আরজেডি)। মোট ১৪৩টি আসনে লড়াই করে দলটি জিতেছে মাত্র ২৫টি আসনে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে, আসনসংখ্যায় ব্যর্থ হলেও আরজেডি-ই পেয়েছে এই নির্বাচনের সর্বোচ্চ ভোটশেয়ার।
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ভোটগণনায় দেখা যায়— আরজেডি মোট ২৩% ভোট পেয়েছে, যা যেকোনও একক দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও আগের নির্বাচনে তাদের ভোটশেয়ার ছিল ২৩.১১%— অর্থাৎ সামান্যই কমেছে। বিজেপি এ বার পেয়েছে ২০.০৭% ভোট, যা ২০২০-র ১৯.৪৬%-এর তুলনায় বৃদ্ধি।
তাহলে সর্বোচ্চ ভোটশেয়ার পেয়েও আরজেডি হারল কেন?
ভোটশেয়ার মানে হল কোনও দল মোট প্রদত্ত ভোটের কত শতাংশ পেয়েছে— যা জনপ্রিয়তার সূচক। কিন্তু ভোটশেয়ার বেশি হলেই যে বেশি আসন মিলবে, তা নয়।
আরজেডি-র ক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক সেইটাই—
প্রথমত,আরজেডি অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে থেকেও প্রচুর ভোট পেয়েছে। সেই সব ভোট তাদের মোট ভোটশেয়ার বাড়ালেও তাতে আসন পাওয়া যায়নি। এই ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘wasted votes’-এর ফলে ভোট বাড়লেও আসন বাড়েনি।
দ্বিতীয়ত, এ বার আরজেডি লড়েছে ১৪৩টি আসনে— যেখানে BJP এবং JDU লড়েছে মাত্র ১০১টি করে আসনে। অর্থাৎ বেশি আসনে লড়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আরজেডি-র মোট ভোটসংখ্যা বেড়েছে।
ECI-এর তথ্য অনুযায়ী—
- আরজেডি পেয়েছে ১,১৫,৪৬,০৫৫ ভোট
- BJP পেয়েছে ১,০০,৮১,১৪৩ ভোট
তবে ভোটসংখ্যা বেশি হলেই সেটা আসনে রূপান্তরিত হবে— এমন নিশ্চয়তা নেই।
আরও পড়ুন: বিহার ভোটে NDA-র দুর্ধর্ষ জয়, শাসকের পুনরুত্থান–বিরোধীরা ছন্দহীন; কারা জিতল, কারা হারল
মহাগঠবন্ধনের বাকি দলের ফলও হতাশাজনক
আরজেডি-র জোটসঙ্গী কংগ্রেস লড়েছিল ৬১টি আসনে, জিতেছে মাত্র ৬টি।
বাম দলগুলির অবস্থাও খারাপ—
- CPI(ML)L পেয়েছে ২টি
- CPI(M) পেয়েছে ১টি
- CPI শূন্য
অর্থাৎ পুরো মহাগঠবন্ধন মিলিয়ে আসনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫-এ— যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম।
प्रो-पीपल, प्रो-गवर्नेंस और प्रो-डेवलपमेंट की हमारी राजनीति के चलते आज देशभर में लोग एनडीए को एक विश्वास और उम्मीद के साथ देख रहे हैं। इसी राह पर चलते हुए हम बिहार को भी विकसित बनाएंगे। pic.twitter.com/SejNcQWRhm
— Narendra Modi (@narendramodi) November 15, 2025
অন্য দিকে NDA-র ভরাডুবি নয়, বরং রেকর্ড জয়
এ বার NDA পেয়েছে ২০২টি আসন— যার মধ্যে
- BJP ৮৯
- JDU ৮৫
- LJP(RV) ১৯
- HAM ৫
- RLM ৪
BJP-র আসনসংখ্যা আবার জোটে সবচেয়ে বেশি।
মোদ্দা কথা
বিহার নির্বাচনে আরজেডি যদিও সর্বোচ্চ ২৩% ভোটশেয়ার পেয়েছে, তবুও আসন জয়ের ক্ষেত্রে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। এর মূল কারণ— অনেক আসনে আরজেডি দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে থেকেও বিপুল ভোট পেয়েছে, যা তাদের মোট ভোটশেয়ার বাড়ালেও কোনও আসনে লাভ এনে দেয়নি। ফলে প্রচুর ভোট বরবাদ হয়েছে ‘ওয়েস্টেড ভোট’-এর মতো।
অন্য দিকে আরজেডি লড়েছে ১৪৩টি আসনে, যেখানে BJP ও JDU লড়েছে ১০১টি করে আসনে— ফলে বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আরজেডি স্বাভাবিকভাবেই বেশি ভোট পেয়েছে, কিন্তু তা কার্যকর আসনে রূপান্তরিত হয়নি। জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও বাম দলগুলির খারাপ ফলও পুরো মহাগঠবন্ধনকে পিছিয়ে দিয়েছে। বিপরীতে NDA-র শক্ত সংগঠন, আসনভিত্তিক কৌশল এবং ভোটের কার্যকর রূপান্তর তাদের ২০২টি আসনের বিশাল জয় এনে দিয়েছে। অর্থাৎ জনপ্রিয়তা বা ভোটসংখ্যা বেশি হলেই জেতা যায় না— সঠিক কৌশল, উপযুক্ত আসনবণ্টন এবং ভোটকে আসনে রূপান্তরের ক্ষমতাই চূড়ান্ত ফল নির্ধারণ করে।
আরও পড়ুন: ব্যঙ্গেই ভবিষ্যদ্বাণী! যশবন্ত সিনহার ‘এক্স’ পোস্টের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেল বিহার নির্বাচনের ফল


