Homeপ্রবন্ধআরজি কর কাণ্ড নিয়ে দিদি-মোদী সেটিংয়ের অভিযোগ, পথে থেকেও সিপিএম কি কোণঠাসা?

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে দিদি-মোদী সেটিংয়ের অভিযোগ, পথে থেকেও সিপিএম কি কোণঠাসা?

প্রকাশিত

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল ছবি

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে বাংলার রাজনীতিতে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছে, মাস পেরলেও তার রেশ পুরো দমে অব্যাহত। দিন যত এগোচ্ছে, এই ঘটনায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির ‘গোপন সমঝোতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় কোনো রকম সমঝোতা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। অভিযোগ করা হচ্ছে, আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের জন্য দিদি-মোদী গট আপ হচ্ছে। বলে রাখা ভালো, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অভিযোগে সরব বামপন্থীরা।

এই অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তোলা হচ্ছে সিপিএমের পক্ষ থেকে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। বর্তমানে, আরজি কর কাণ্ডে তৃণমূল ও বিজেপির ‘গোপন সমঝোতা’ নিয়ে সরব হয়ে জোরদার প্রচারে নেমেছেন সিপিএম সমর্থক হিসাবে পরিচিত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। কিন্তু, তাঁদের এই অভিযোগে কতটা সারবত্তা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আরজি করের ঘটনার পর জনমনে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটাকে সম্মিলিত ভাবে কাজে লাগাতে পারছে না সিপিএম এবং বিজেপির মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। যার ফলে লক্ষ্য একই হলেও তারা এই ইস্যুতে একে অন্যকে আক্রমণ করতেও ছাড়ছে না।

কয়েক বছর পিছনে তাকালে দেখা যায়, বামেরা বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূল এবং বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ শানিয়ে আসছে। অতীতে দুই দলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা খুঁচিয়ে প্রায়শই গোপন সমঝোতার অভিযোগ শানাতে দেখা গেছে। একটাই ফলায় তৃণমূল এবং বিজেপিকে বিদ্ধ করতে চায় সিপিএম। কিন্তু ক্ষমতাহারা হওয়ার পর তারা যতবার কোনো ইস্যুতে তৃণমূল এবং বিজেপির গোপন আঁতাতের দাবি করেছে, প্রত্যেকবারই সেই ইস্যুতে কোণঠাসা হতে হয়েছে সিপিএমকে। কোণঠাসা হতে হতে সিপিএম-ও সেই ইস্যু থেকে নিজেদের গুটিয়েও নিয়েছে। এই যেমন, সদ্য শেষ লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় সরকার না কি রাজ্য সরকার, আক্রমণে কাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে, সেটা স্পষ্ট না হওয়ায় ভোটের বাক্সে ডুবতে হয়েছে।

তবে আরজি কর ইস্যুতে সিপিএম বড্ড তাড়াতাড়ি দিদি-মোদী গটআপের অভিযোগ তুলে ফেলল বলেই ধরে নেওয়া যায়। ১৪ আগস্ট মানুষের রাতদখল, ২৭ আগস্ট গেরুয়া শিবিরের নবান্ন অভিযানে স্পষ্ট ভাগাভাগি। সিপিএম এবং বিজেপির টানাটানিতে দ্রুত মেরুকরণ দেখা দিচ্ছে আন্দোলনে। ৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে তেমন কোনো চমক না থাকায় প্রধান বিচারপতি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক বিষোদগার। আর তারপর দ্রুত দিদি-মোদী গোপন সমঝোতার তত্ত্ব।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নৃশংস খুন করার ঘটনায় জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফ থেকে আন্দোলন শুরু হয়, তারা সুবিচারের দাবিতে পথে নামে। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা, বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তাররা, পথে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এমনকি, সারা বাংলায় এই ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য পরিষেবা সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। সেই আন্দোলন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

রাজ্যের শাসক দল হিসেবে, এই ঘটনার পর থেকে এক ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমদিকে এই ঘটনার গুরুত্ব স্বীকার করলেও, বিরোধী দলের অভিযোগ, তিনি ও তাঁর দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি। তৃণমূলের এই মনোভাব নিয়ে বিজেপি ও সিপিএম উভয়ই সরব হয়েছে। তাদের মতে, তৃণমূল এই ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না, কারণ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো অস্বস্তি তৈরি না হয়।

সিপিএমের দাবি, বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে একে অপরকে সাহায্য করছে, যা আসলেই বাংলার সাধারণ মানুষের এবং চিকিৎসকদের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

সিপিএম এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে আরও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। আরজি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে তাদের কর্মসূচি নতুন করে চালু হয়েছে এবং তারা মিছিল, বিক্ষোভ এবং পথসভা করছে। সিপিএমের দাবি, তারা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এবং বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।

কিন্তু সিপিএমের আন্দোলন সত্ত্বেও, তারা বাংলার রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সিপিএমের আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট পরিসরে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে এবং তারা রাজ্য জুড়ে একটি বৃহত্তর জনসমর্থন পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে, তাদের আন্দোলন নিছক একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে, যা তাদের আরও কোণঠাসা করে তুলছে।

সিপিএমের এই কোণঠাসা অবস্থার মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করছেন, সিপিএমের জনভিত্তি এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে গেছে। একসময়ের শক্তিশালী দলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে এবং তারা জনমনে তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

দিদি-মোদী গটআপের অভিযোগ কি সত্যিই বাস্তব, নাকি এটি কেবল একটি রাজনৈতিক প্রচারের অংশ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আরজি কর কাণ্ড বাংলার রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ঘটনার পর থেকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। বিরোধী দল সিপিএম এই ঘটনার মাধ্যমে রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় হলেও, তাদের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তৃণমূল ও বিজেপির ‘গোপন সমঝোতা’ নিয়ে সিপিএম যে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে, তা বাংলার রাজনীতিতে আবারও এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে, এই সমঝোতা কতটা বাস্তব এবং এটাকে প্রচারে এনে সিপিএম আদৌ কোনো অ্যাডভান্টেজ পাবে কিনা, তা সময়ই বলবে।

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

কলকাতায় সাউথ সিটি মলে স্কেচার্সের নতুন স্টোর উদ্বোধন করলেন কার্তিক আরিয়ান

কলকাতার সাউথ সিটি মলে নতুন স্টোর খুলল স্কেচার্স। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর কার্তিক আরিয়ান। কমিউনিটি গোল চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে কেল ফাউন্ডেশনে শিশুদের জন্য জুতো দান করল সংস্থা।

পুজোর আগে সুখবর, সরকারি কর্মীদের জন্য এলটিসি-এইচটিসির মেয়াদ বাড়ল এক বছর

রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন। এলটিসি ও এইচটিসির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হল। আগামী এক বছরের মধ্যে যাঁরা সুবিধা নিতে পারেননি, তাঁরা তা ব্যবহার করতে পারবেন।

কবি সুভাষের পর শহিদ ক্ষুদিরামেও পরিষেবা কমল, পুজোর মুখে বিপাকে মেট্রো যাত্রীরা

দক্ষিণ কলকাতার শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে মেট্রো পরিষেবা কমানোর সিদ্ধান্ত নিল কর্তৃপক্ষ। কবি সুভাষ স্টেশনে সংস্কারের কাজ চলায় আগেই বন্ধ ছিল পরিষেবা। বৃহস্পতিবার লাইনের গণ্ডগোলে অর্ধঘণ্টা বন্ধও থাকল মেট্রো।

উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, দক্ষিণেও ঝড়বৃষ্টি; একাধিক জেলায় সতর্কতা জারি

মৌসুমি অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে রাজ্যে ঝড়বৃষ্টি। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা, আলিপুরদুয়ারে কমলা সতর্কতা। দক্ষিণবঙ্গেও একাধিক জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি।

আরও পড়ুন

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ভুলে গিয়েছি অগ্নিস্নাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষকে  

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি। বিধানচন্দ্র রায়কে আশীর্বাদও করেননি। বল্লভভাই পটেলের...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: ‘এবার তবে আসি মা!’

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায় একটা সুবৃহৎ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস এত পক্ষপাতিত্ব করে লেখা হয়েছে, যার উদাহরণ...

স্বাধীনতা আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস: জালিয়ানওয়ালাবাগ ও উধম সিং

সে দিন ব্রিটিশ শাসক অসংখ্য নিরপরাধ ভারতীয় নরনারীকে বুলেটের বন্যায় ধরাশায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, শহরের গণ্যমান্য নাগরিকদের ঘর থেকে বাইরে টেনে টেনে এনে রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে ভারতীয়দের নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিল ব্রিটিশ শাসক সে দিন।