নিত্যদিন ভোরবেলায় একই ছবি। ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত গ্রামগুলিতে তখনও কাকপক্ষী ডাকেনি। তবে শুরু হয়ে গিয়েছে বেআইনি কার্যকলাপ।
ঘটনায় প্রকাশ, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা পায়ে হেঁটে বা ছোট যানবাহনে প্রতিবেশী দেশে চাল পাচারের জন্য রওনা দিচ্ছে ভোরসকালে। অল্পবয়সি বেকার যুবক-যুবতী, এমনকী কখনও কখনও বয়স্করাও স্থানীয় চোরাচালানকারীদের বাহক হিসাবে কাজ করছেন। সীমান্তের ওপারে নেপালি ব্যবসায়ীদের গুদামে এক কুইন্টাল চাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। যত বেশি চাল পৌঁছে দেওয়া যাবে, ততই ভরবে পকেট।
পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে ইকনোমিকস টাইমস-এর রিপোর্ট বলছে, লক্ষ্মীনগর, থুথিবাড়ি, নিচলৌল, পার্সা মালিক, বরগাদোয়া, ভগবানপুর, শ্যাম কাট, ফারেনিয়া, হার্দি ডালি এবং খানুয়া হল এমন কিছু গ্রাম যেখান থেকে নেপালে পাড়ি দেওয়া খুব সহজ। সেই রাস্তা দিয়েই চাল পাচার করা হয়।
চোরাচালানের কাজে যুক্ত এক ব্যক্তি সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, “নেপালি ব্যবসায়ীরা সীমান্তে ছোটো গুদাম তৈরি করেছেন। যেখানে আমরা চোরাচালান করা চাল মজুত করি। প্রতি সপ্তাহে গুদামগুলি খালি করা হয় এবং সংগ্রহ করা চাল একটি বড়ো গুদামে স্থানান্তরিত হয়।” এই কাজের বেশির ভাগটাই ভোরবেলায় হয় বলে জানান তিনি। তবে দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর থেকে রাত নামার আগেই চালের বস্তা অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। কারণ, এর পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। একেকটি বস্তায় অন্তত পক্ষে ১০ কেজি চাল বহন করা হয়।
সরকারি কর্তাদের মতে, সশস্ত্র সীমা বল বা এসএসবি এবং পুলিশ নেপালে পাচার করা ১১১.২ টনেরও বেশি চাল বাজেয়াপ্ত করেছে। এ ভাবে চোরাচালান বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ব্যাপক লাভের হাতছানিতে অবৈধ কাজ ক্রমশ বাড়ছে।
স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়াতে এবং আসন্ন উৎসবের মরশুমে চালের খুচরো দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জুলাই মাসে নন-বাসমতি সাদা চাল রফতানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। যে কারণে গত কয়েক মাসে নেপালে চালের দাম বেড়েছে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে নেপালে চাল রফতানি করতেন এমন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, যে চাল এখানে ১৫-২০ টাকা প্রতি কেজি দামে বিক্রি হয়, সেটাই নেপালে গিয়ে হয়ে যায় ৭০ টাকা প্রতি কেজি। অর্থাৎ, সহজেই বোঝা যায় ব্যাপক লাভের হাতছানিতেই চোরাচালানের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।