ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম শেয়ার বাজার কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) হয়তো খুব শীঘ্রই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতে চলেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)-র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে, যার অনুমতি পেলে তারা ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’ হিসেবে স্বেচ্ছামূলক প্রস্থান (Voluntary Exit) গ্রহণ করবে।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি জানান, ২০২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, CSE তাদের স্বেচ্ছামূলক প্রস্থানের প্রস্তাব জমা দেয় সেবির নির্ধারিত নীতিমালার অধীনে। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে সেই প্রস্তাবটি সেবির কাছে পরীক্ষাধীন রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, এই প্রশ্নটি তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
এক সময়ের গৌরব এখন অস্তমিত সূর্য
সিএসই-র সঙ্গে যুক্ত একাধিক প্রবীণ ব্রোকারের কথায়, ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে এমন বহু দিন গিয়েছে, যেদিন কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক লেনদেন বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE) থেকেও বেশি ছিল। এমনকি কিছু দিন লেনদেনের নিরিখে শুধুমাত্র ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE)-র পরেই ছিল CSE।
একজন প্রাক্তন সদস্য জানিয়েছেন, ২০০০ সালে একদিনে সিএসই-তে ২,০০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। আবার ২০০১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড় দৈনিক লেনদেন ছিল ১,০০০ কোটি টাকা।
বিক্রির চেষ্টা, আইনি জটিলতা ও শেষ চেষ্টা
বিগত এক দশকে সিএসই নিজেকে বাঁচাতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা করেছিল। এর মধ্যে ছিল EM বাইপাস সংলগ্ন জমি ২৫৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে একটি ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন গঠন করার পরিকল্পনা। কিন্তু সেই বিক্রির অনুমোদন তারা পায়নি।
২০১৩ সাল থেকে CSE-তে লেনদেন কার্যত বন্ধ। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শেষবার সিএসই-র মোট লেনদেন ছিল ৯,৫০০ কোটি টাকা।
এরপর ২০১৫ সালের মে মাসে, সেবি তাদের বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী CSE-র বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক প্রস্থান প্রক্রিয়া (Compulsory Exit) শুরু করে। এর বিরুদ্ধে CSE কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দায়ের করে।
আদালতের রায় এবং সময়সীমা
চলমান মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয় যে, সিএসই-কে ছয় মাস সময় দেওয়া হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে সংস্থাটিকে হয় নিজস্ব ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন গড়তে হবে, নয়তো কোনও বিদ্যমান ক্লিয়ারিং কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে হবে। অন্যথা, সেবি তার আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে পারবে।
চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগোচ্ছে CSE?
বর্তমানে সমস্ত আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকল্প শেষ হয়ে আসার পরে, CSE তাদের নিজের ইচ্ছায় স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে প্রস্থান করার প্রস্তাব দিয়েছে। এক সময় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শেয়ার বাজার আজ একপ্রকার নির্বিকার অবস্থা কাটাচ্ছে।
সেবি অনুমোদন দিলে, ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাচীন সংস্থার ১১৬ বছরের যাত্রাপথ শেষ হবে।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

