Home শিল্প-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে পাকিস্তানকে মোটা অঙ্কের ঋণ, পাশে দাঁড়িয়েছিল কোন কোন দেশ?

আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে পাকিস্তানকে মোটা অঙ্কের ঋণ, পাশে দাঁড়িয়েছিল কোন কোন দেশ?

আইএমএফ

বিশ্ব রাজনীতির অদ্ভুত নিয়ম—কৌশলগত স্বার্থ যেখানে অগ্রাধিকার পায়, নৈতিকতা সেখানে অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে। পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে সাম্প্রতিক এক বিশাল ঋণের অনুমোদন এই সত্যকে ফের একবার সামনে আনল।

এই ঋণ অনুমোদনের পিছনে রয়েছে সৌদি আরব, চিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (UAE) সক্রিয় সমর্থন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নিজেই জানিয়েছেন, এই দেশগুলোর দ্বিপাক্ষিক সহায়তা ও আর্থিক নিশ্চয়তাই IMF-এর শর্ত পূরণে মূল সহায়ক হয়েছে।

IMF-এর ২৪ সদস্যের নির্বাহী বোর্ড এই ঋণ অনুমোদন করে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ভোট ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (১৬.৫%), এরপর জাপান, চিন, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের। অর্থাৎ, এই ঋণ অনুমোদনের নেপথ্যে বৃহৎ শক্তিগুলির মৌন সম্মতিও ছিল স্পষ্ট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চিনের এই সহায়তা কোনও মানবিকতার ফল নয়, এটি সম্পূর্ণ কৌশলগত। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC)-এর মাধ্যমে বহু বছর ধরে চিন পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পাল্টা ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানকে পাশে রাখা চিনের একপ্রকার প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, সৌদি আরবের পাকিস্তান সমর্থন নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বন্ধন রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি বলয়ের অংশ হিসেবে পাকিস্তানকে পাশে রাখা সৌদি কূটনীতির অংশ। অথচ পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইতিহাসজুড়ে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই সমর্থন অব্যাহত—এটি এক গভীর দ্বিচারিতা।

একইভাবে, ইউএইও পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। শান্তির বার্তা দিলেও, তাদের এই অর্থনৈতিক সহায়তা বাস্তবে এক প্রশ্ন তুলে দেয়—এই সহায়তা কি সত্যিই শান্তির লক্ষ্যে, নাকি কৌশলগত অবস্থান বজায় রাখার কৌশল?

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

বিশ্ব যে পাকিস্তানকে ক্রমাগত আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছে, সেটি শুধু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য নয়—এই সহায়তা একাধিকবার একটি রাষ্ট্রযন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করছে, যে রাষ্ট্র ইতিহাসজুড়ে সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা বলে অভিযুক্ত।

এই অর্থ প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে না বলেই সন্দেহ অনেকের। বরং এটি একটি সামরিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করছে, যেটি ভারতের বিরুদ্ধে একাধিকবার ছায়াযুদ্ধের আশ্রয় নিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—বিশ্বের শান্তি নাকি বিশ্বশক্তির স্বার্থ বেশি মূল্যবান?

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version