২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামো। ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০%। এর ফলে ভারতের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজারে পণ্যের প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Federation of Indian Export Organisations (FIEO) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প মারাত্মক বিপাকে পড়েছে। তিরুপুর, নোয়ডা ও সুরাটের বহু প্রস্তুতকারক উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। FIEO সভাপতি এস. সি. রালহান বলেন, “এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতের রফতানি প্রতিযোগিতায় মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই ৩০–৩৫% মূল্যবৈষম্যের কারণে ভারতীয় পণ্য চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ফিলিপিন্সের তুলনায় অপ্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে।”
কোন কোন খাত ক্ষতিগ্রস্ত
- টেক্সটাইল ও পোশাক: তিরুপুর, নয়ডা ও সুরাটে উৎপাদন বন্ধ।
- সিফুড (বিশেষত চিংড়ি): যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রায় ৪০% সিফুড রফতানি গ্রহণ করে। শুল্ক বৃদ্ধিতে মজুত পচে যাওয়ার আশঙ্কা, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত, কৃষক সংকটে পড়বেন।
- শ্রমনির্ভর শিল্প: চামড়া, সিরামিক, কেমিক্যাল, হস্তশিল্প, কার্পেট প্রভৃতি খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হারাবে ভারতীয় রফতানিকারীরা।
আশঙ্কা ও প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে—
- ২০২৫-২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রফতানি ৪০–৪৫% কমে যেতে পারে।
- প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রফতানি পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক কার্যকর হবে।
- কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর শুল্ক হার ৬০% ছাড়িয়ে যাবে।
- ২০২৪-২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্যের রফতানি প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার ছিল। GTRI-র হিসেব অনুযায়ী এই বছর তা নেমে আসতে পারে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলার-এ।
বিশেষত বস্ত্র শিল্পের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত আসছে। The Wire–এর রিপোর্ট বলছে, নতুন শুল্ক ব্যবস্থায় নিট ও বোনা পোশাকে সর্বোচ্চ শুল্ক ধাক্কা পড়বে।
সরকারের প্রতি রফতানিকারীদের আবেদন
FIEO সভাপতি রালহান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জরুরি সহায়তার দাবি জানিয়ে বলেছেন—
- রফতানিকারীদের জন্য সুদ ভর্তুকি স্কিম
- এক্সপোর্ট ক্রেডিট সাপোর্ট
- কর্মরত মূলধন ও তারল্য টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই অতিরিক্ত শুল্ক নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন কূটনীতিকরা। প্রাক্তন বিদেশসচিব বিবেক কাটজু বলেছেন, “মোদী সরকার এবং বিশেষ করে বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় দফায় প্রস্তুতির অভাব ছিল। এর উত্তর দেশের জানা প্রয়োজন।”
অন্যদিকে কর বিশেষজ্ঞ বেদ জৈন মন্তব্য করেন, “তৃতীয় দেশকে চাপ দিয়ে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা কি ন্যায়সঙ্গত?”
৫০% মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার ফলে ভারতীয় টেক্সটাইল, পোশাক, সীফুড এবং শ্রমনির্ভর রফতানির বড় ধাক্কা আসতে চলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, লক্ষাধিক কম দক্ষ কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্যে ৫০% শুল্ক! ট্রাম্পের বাণিজ্যিক দাদাগিরির মধ্যেও কোন পণ্য ছাড় পাচ্ছে জানুন