বিশ্বের তত্ত্ব ও দর্শনের জগতে ভারতীয় মেধার গর্বিত প্রতিনিধি অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক চলতি বছরে নরওয়ের হলবার্গ পুরস্কার পাচ্ছেন। আর্টস ও হিউম্যানিটিজের ‘নোবেল’ হিসেবে পরিচিত এই পুরস্কার তাঁর দীর্ঘ গবেষণা ও শিক্ষাজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।
গত ১৩ মার্চ হলবার্গ পুরস্কার কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, তুলনামূলক সাহিত্য, নিম্নবর্গের ইতিহাস, নারীবাদ, সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা ও অধ্যাপনার স্বীকৃতিস্বরূপ গায়ত্রী স্পিভাক এই সম্মান পাচ্ছেন। আগামী ৫ জুন নরওয়ের বেরজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পুরস্কার তুলে দেবেন সে দেশের যুবরাজ হাকোন। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা।
মানববিদ্যার প্রতি অঙ্গীকার
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী স্পিভাক মানববিদ্যার গুরুত্ব নিয়ে বরাবরই সরব। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, “উচ্চশিক্ষায় মানববিদ্যাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। মানববিদ্যা ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎই শেষ।” সেই চর্চারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল তাঁর এই হলবার্গ পুরস্কার।
পুরস্কার কমিটির প্রশংসা
হলবার্গ পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান হাইকি ক্রিগার বলেন, “পাশ্চাত্য চিন্তার মূল ধারণাকে গ্রহণ করলেও গায়ত্রী স্পিভাক সমালোচনার ভিতরে রেখেছেন ক্রমাগত প্রশ্ন করার অভ্যাস। তিনি আধুনিক বিশ্বচিন্তার কেন্দ্র ও প্রান্ত—দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে কাজ করেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
গায়ত্রী স্পিভাকের এই বিরল সম্মানে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ লিখেছেন, “আর এক বড় সম্মান পেয়ে আমাদের গর্বিত করলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। সাহিত্য তত্ত্ব ও দর্শনে তাঁর অবদান অসামান্য। তবে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য তাঁর স্বেচ্ছাসেবা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী রচনাগুলির ইংরেজি অনুবাদেও তাঁর অবদান প্রশংসনীয়।”
বাঙালি মেধার বিশ্বজয়
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শুধুমাত্র ভারত নয়, বাংলার জন্যও এক গর্বের মুহূর্ত। তাঁর গবেষণা ও চিন্তাধারার গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।