Home নাটক শিবরামের ‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’ এবং কবিগুরুর ‘তোতা কাহিনী’ অবলম্বনে সফল নাটক মঞ্চস্থ করল...

শিবরামের ‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’ এবং কবিগুরুর ‘তোতা কাহিনী’ অবলম্বনে সফল নাটক মঞ্চস্থ করল ‘চণ্ডীতলা প্রম্পটার’  

‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’র একটি দৃশ্য।

অজন্তা চৌধুরী

‘চণ্ডীতলা প্রম্পটার’-এর প্রযোজনায় ১৪ মে মধুসূদন মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়ে গেল ‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প অবলম্বনে ‘তোতা কাহিনী’ নাটকদুটি। ব্যঙ্গাত্মক নাটক ‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’-র রচয়িতা শিবরাম চক্রবর্তী। নাট্যরূপ দিয়েছেন গীতা দাস, নির্দেশনায় সুমন্ত গঙ্গোপাধ্যায়।

‘প্রাণকেষ্টর প্রাণান্ত’ নাটকটি এক সাদাসিধে কর্মচারী প্রাণকেষ্টকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। সে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল হলেও আত্মীয়দের জন্য সাধ্যমতো আপ্যায়নে কখনও কার্পণ্য করে না। কিন্তু আত্মীয়রা তার সরলতাকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যঙ্গ করে। এক রাতে সে একটি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে — যেখানে তার পূর্বপুরুষেরা নানা ভণ্ড, স্বার্থান্ধ উপদেশ দেয়, যেমন আত্মীয়দের চা-বাগানে বিক্রি করে দেওয়া, বলি দিয়ে খেয়ে ফেলা কিংবা ধর্মের মোড়কে সর্বস্ব লুটে নেওয়া। ঘুম ভাঙার পর প্রাণকেষ্ট সেই স্বপ্নের প্রভাবে অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করলে আত্মীয়রা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। এই নাটক হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের আত্মসর্বস্বতা, কুসংস্কার এবং ঠুনকো আত্মীয়তার মুখোশ উন্মোচন করে।

নাটকের উপস্থাপনায় রস ও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গের অনন্য সংমিশ্রণ ঘটে, যা হাসির ফোয়ারার মধ্যেও বাস্তব সমাজের চিন্তাকে উসকে দেয়। এই নাটক আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় – সরলতা কী ভাবে উপহাসের শিকার হয় এবং ভণ্ডামি কী ভাবে সমাজে আদর্শের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়। প্রাণকেষ্ট চরিত্রে প্রদীপ রায়ের অভিনয় অনবদ্য। প্রাণকেষ্টর স্ত্রীয়ের চরিত্রে রূপদান করেন তমসা ঘোষ। এ ছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন পিউ চক্রবর্তী, কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, পূর্ণিমা মুখার্জি, সপ্তবর্ণা আলু, আদিত্যনারায়ণ ভট্টাচার্য, কৌশিক মাল, অরূপ চৌধুরী প্রমুখ। আলো পরিকল্পনায় পলাশ দাস, মঞ্চনির্মাণে চঞ্চল আচার্য্য, আবহ প্রক্ষেপণে অয়ন রায়, মেক-আপে নেপাল চক্রবর্তী। এ দিন নাট্য প্রযোজনার পূর্বে একক নৃত্য পরিবেশন করেন ঈশিকা সামন্ত।

‘তোতা কাহিনী’র একটি দৃশ্য।

এ দিনের দ্বিতীয় নাটক ছিল ‘তোতা কাহিনী’। কবিগুরুর ১৬৪তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। নির্দেশনায় ছিলেন প্রদীপ রায়। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কৃত্রিমতা ও নিষ্ঠুরতার সমালোচনা করেছেন। পাখিটি স্বাধীন মনের প্রতীক, সেই খাঁচা ও পাঠ্যপুস্তক নির্দেশ করে একঘেয়ে, যান্ত্রিক শিক্ষাপদ্ধতিকে। লেখক দেখাতে চেয়েছেন, প্রকৃত শিক্ষা মানে জীবনঘনিষ্ঠ, মুক্তচিন্তা ও আনন্দদায়ক জ্ঞানার্জন। জবরদস্তি মুখস্থ করিয়ে দেওয়া নয়।

অভিনয়ে ছিলেন আদিত্য রায় (রাজা), শুভম দাস (মন্ত্রী), নীলাদ্রি রায় (ভাগনা), সপ্তবর্ণা আলু (সূত্রধর ও কামার গিন্নী), পিয়াসা ঘোষ (তোতা), অন্বেষা মুখার্জি (নিন্দুক ১), শ্রেয়শ্রী আচার্য (নিন্দুক ২), দেবজ্যোতি রায় (পণ্ডিত ১), সত্যম ঘোষ (পণ্ডিত ২), রিতম পান (পণ্ডিত ৩), পিউ চক্রবর্তী (লিপিকার ১), অনু রায় (লিপিকার ২), রিয়ন মুখার্জি (লিপিকার ৩), রণাক মুখার্জি (কোতোয়াল), প্রদীপ রায় (কামার)। অভিনয়ে সকলেই ছিলেন যথাযথ।

আরও পড়ুন

ক্যানডিড থিয়েটারের প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল জীবনানন্দের ‘মাল্যবান’ 

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version