Home দুর্গাপার্বণ ৮৭তম বছরে দক্ষিণ কলকাতার ‘শিবমন্দির’-এর পুজোর থিম ‘আগল’   

৮৭তম বছরে দক্ষিণ কলকাতার ‘শিবমন্দির’-এর পুজোর থিম ‘আগল’   

0
চলছে মণ্ডপসজ্জা। ছবি: রাজীব বসু।

দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যশালী পুজো ‘শিবমন্দির’ এ বার ৮৭তম বছরে পড়ল। এ বার তাদের থিম ‘আগল’।  

‘আগল’ – কী বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে এই নামের মধ্য দিয়ে। শিবমন্দির সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির কর্মকর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, “মায়ের আঁচলের আড়ালে শিশুরা সব সময় সুরক্ষিত, নিরাপদ বোধ করে। কারণ, মায়ের আঁচল শিশুকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ঝাপটা, সব কিছু হেলায় রুখে দেয় মায়ের আঁচলের আগল। শিশুর মতোই বাড়ির সদর দরজা বন্ধ থাকলে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে গৃহস্থ। কারণ সদর দরজার আগল সরলেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। আবার প্রদীপের অনির্বাণ শিখাকে জ্বলতে সাহায্য করে মাটির সরা। ঠিক একই ভাবে মেঘের আগল ভেঙে সূর্য যখন বেরিয়ে আসে তখন আলোকিত হয়ে ওঠে চারিপাশ। তেমনই দুর্গতিনাশিনী, অসুরদলনী সর্বমঙ্গলা মা দুর্গা অশুভশক্তি, সব দুষ্টের সামনে আগল তুলে দেন বলেই আমরা সব চেয়ে নিরাপদ বোধ করি। এ বারের থিমের মাধ্যমে আমরা এই বার্তাই দিতে চলেছি।”

বিখ্যাত থিমশিল্পী বিমল সামন্তর কন্যা সূচনা রয়েছেন এ বছর শিবমন্দিরের পুজোর সৃজনের দায়িত্বে। থিম প্রসঙ্গে সূচনা বললেন, “আজকের দিনে চারিদিকে প্রতিযোগিতা চলছে অনবরত। প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থায় আমরা প্রত্যেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সব সময় প্রকৃত অভিভাবকের অভাব অনুভব করছি। এমন একজন অভিভাবক যিনি আমাদের সবাইকে সব সময় আগলে রাখবেন। কিন্তু আমাদের চিন্তা কীসের? কারণ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন স্বয়ং মা দুর্গা। তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত আগলে রাখেন। এই ভাবনা থেকেই এ বারের থিম ‘আগল’।”

চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: রাজীব বসু

থিমভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কী ভাবে মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে তা বুঝিয়ে দিলেন সূচনা। তাঁর কথায়, “খিল কথার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে আগল। যা আগলে রাখার কথা বলে, সংরক্ষণ করার পথ দেখায়। প্রকৃতিও আমাদের সব সময় পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে আগলে রাখে। ঘরকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা খিল বা ছিটকিনি দিই। এ ছাড়া আমরা যে বিভিন্ন রকমের মাটির পাত্র দেখি, তা ঢাকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় মাটিরই তৈরি সরা। মাটির সরা ব্যবহার করা হচ্ছে মণ্ডপসজ্জায়। আমরা আমাদের শরীর ঢাকতে পোশাক আবরণ হিসাবে ব্যবহার করি। তেমনই গোটা বিশ্বই ঢাকা রয়েছে মাটি দিয়ে। জল সংরক্ষণের বার্তা দিতে, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে মণ্ডপনির্মাণে। মাটির নিজস্ব রঙের পাশাপাশি ভেষজ  বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। মণ্ডপও মাটির হচ্ছে। মা দুর্গা আমাদের আগলে রাখছেন, এ রকম আদলেই প্রতিমা গড়া হচ্ছে।”

শিবমন্দিরের এ বারের প্রতিমা গড়ছেন দীপঙ্কর পাল। আলোর দায়িত্বে রয়েছেন বিখ্যাত শিল্পী প্রেমেন্দুবিকাশ চাকি। সহযোগী হিসেবে আলোর দায়িত্বে রয়েছেন সুশান্ত হালদার। এ বছর শিবমন্দিরের পুজোর আবহের দায়িত্বে রয়েছেন বিখ্যাত সুরকার জয় সরকার। থিমের গ্রন্থনার দায়িত্বে রয়েছেন বিখ্যাত সাংবাদিক দেবদূত ঘোষঠাকুর।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version