ধর্মীয় সব বাধা পেরিয়ে, দেশকাল নির্বিশেষে মানুষ দুর্গাপুজোয় শামিল হয় বলে ২০২১ সালে ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবারও দুগ্গা মায়ের আসার খবরেই আনন্দে মেতে উঠেছে আট থেকে আশি সবার মন। পুজোর বাকি আর মাত্র ক’টা দিন। এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে পুজোর প্ল্যানিং। প্রতি বছরই অসাধারণ থিমের মাধ্যমে শিল্পকৃষ্টি তুলে ধরেন শিল্পী বিমল সামন্ত। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। তিনি এবছর উত্তর কলকাতার ‘আহিরীটোলা যুবকবৃন্দ’ আর দক্ষিণ কলকাতার ‘অবসর’ এর পুজোর সামগ্রিক পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছেন।
শিল্পী বিমল সামন্ত বলেন, ‘আহিরীটোলা যুবকবৃন্দ ২০২৫ এর উৎসব প্রাঙ্গণ সাজবে আলো ও ছায়ার সংমিশ্রণে ।এই আলো শুধু উৎসবের সৌন্দর্য নয়, এক গভীর সামাজিক মূল্যবোধেরও প্রতীক। রঙিন আলোর রোশনাই ও ঝলকানিতে সৃষ্টি হবে যেমন এক স্বপ্নময় কল্পনার জগৎ। তেমনই এই আলোর মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠবে সমাজের ঐক্য, সৌন্দর্যবোধ, শ্রদ্ধা ও আনন্দের চেতনা। দুর্গাপুজোর এই প্রাঙ্গণে রঙিন আলো ও তার ছায়ায় তৈরী হবে এক কল্পলোক যেখানে দেবী মৃন্ময়ী মূর্তি হিসাবে নয় হয়ে উঠবেন নারীর মর্যাদা ও সামাজিক জাগরণের প্রতিরূপ। রঙিন ছায়া যেন আমাদের মনে করিয়ে দেবে আলো যেখানে পৌঁছায় সেখানেই কল্পনা উন্মুক্ত হয়। মানুষ স্বপ্ন দেখতে শেখে। এই কল্পনার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের রোশনাই।’

মনের কল্পনাকে ডানা মেলে উড়তে দেওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতার অবসর সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপে শেকড়ে ফেরার ডাক দিচ্ছেন শিল্পী বিমল সামন্ত। অবসর সর্বজনীনের এবারের থিম, ‘গোড়ার কথা’। এমন থিম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিমল সামন্ত বলেন, ‘আজকের আধুনিক সময় জীবন বড়োই দ্রুত গতির যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সমাজে অসহিষ্ণুতা, মানবিক অবক্ষয় ও আত্মকেন্দ্রিকতা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রয়োজন পুরোনো শেকড়ে ফিরে যাওয়া। যেখানে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে মজবুত হয় পারিবারিক বন্ধন। যে সমাজ নিজের শেকড় ভুলে যায় সেই সমাজ নিজেকে হারিয়ে ফেলে। তাই সৃষ্টি ও স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতীকী ভাবনায় তুলে ধরা হচ্ছে ‘গোড়ার কথা।’ প্রতিমা শিল্পী সনাতন পাল।