বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। শরতের আকাশ বাতাসে মেঘমুক্ত পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, জমিতে অনাদারে ফুটে থাকা সাদা কাশফুলের গুচ্ছ দেখলেই প্রত্যেক বাঙালির মন আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ, প্রকৃতিও জানান দেয় বাঙালির প্রাণের পুজো এসে গেছে।
এ বছর এরমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষ। বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায় মহালয়ার দিন। আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী নামক বেতার অনুষ্ঠান যা দীর্ঘ সময় ধরে আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে সেই বেতার অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর স্তোত্রপাঠের মাধ্যমে বাঙালির পুজো শুরু হয়। সাধারণত পুজোয় আমরা মন্ত্রপাঠ ও স্তোত্রপাঠ করতে পুরুষ পুরোহিতদের দেখি। মায়ের পুজোর আরাধনায় এক্ষেত্রে যেন মেয়েরা কিঞ্চিত ব্রাত্যই থেকে যান।
এখন অবশ্য বাংলায় কিছু জায়গায় নিয়মের বেড়াজাল ভাঙা হচ্ছে। বিয়ে যেমন নিয়ম নিষ্ঠা মেনে আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে দিচ্ছেন তেমনই এবছর মা দুর্গার আরাধনাও করবেন মহিলা পুরোহিত। বাংলা তথা দেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর সাগরপাড়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে এবছর দুর্গাপুজোয় ঘটবে এমনই অভাবনীয় ঘটনা। শতাব্দী প্রাচীন রীতি নীতি ভেঙে সম্পূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, নিয়ম নিষ্ঠা মেনে দুর্গাপুজোর আয়োজন করবেন এক মহিলা পুরোহিত।

যুগ যুগ ধরে পুজোয় পৌরহিত্যের দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে নারীদের বাড়িতে মহিলারা পুজো আচ্চা করলেও দুর্গাপুজোর মতো রাজসূয় যজ্ঞের অনুষ্ঠানে পৌরহিত্যের দায়িত্ব থেকে মহিলাদের সন্তর্পণে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়েরাও সেই নিয়ম বাধ্য হয়েই হোক কিংবা হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। শক্তির আরাধনা মা দুর্গার পুজো করে আসছেন পুরুষ পুরোহিতরাই। ধীরে ধীরে কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন জায়গার সমাজ বদলাচ্ছে। এখন মেয়েরা নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে এগিয়ে আসছেন। তাঁরা বৈদিক রীতিনীতির, পুজোপাঠের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বাংলার সীমানা পেরিয়ে এই মহিলাদের পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয় শুরু হয়েছে সুদূর আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াতেও।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে প্রতিভা মেরন্ডা দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় এবছর পৌরহিত্য করবেন ডক্টর মধুমতী চট্টোপাধ্যায় নামে এক মহিলা পুরোহিত। তিনি অনলাইনে পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে মেলবোর্ন শহরের বাসিন্দা মধুমতী চট্টোপাধ্যায়। বাঙালি যতই বাংলার সীমানা পেরিয়ে সুদূর বিদেশে বসবাস করুক না কেন, দুর্গাপুজোর জন্য তার মন সব সময়ই আনচান করে।
একদিন মধুমতী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসে তাঁর এক বন্ধু জানান তাঁদের এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো দুর্গাপুজো হয় না। মধুমতী চট্টোপাধ্যায়ের মনের ইচ্ছে ছিল নিজের বাড়িতে মা দুর্গার আরাধনা করবেন। সেইমতো তিনি ও তাঁর বন্ধু কুমোরটুলিতে এসে পছন্দ করে দুর্গামূর্তি কিনে নিয়ে যান। কিন্তু পুরোহিতের জোগাড় করতে পারেননি তাঁরা তাই সে সময় মেলবোর্নে পুজোর আয়োজন শুরু করা যায়নি। এরপর জুমের সাহায্যে অনলাইনে এক অভিজ্ঞ পুরোহিতের কাছ থেকে মধুমতী চট্টোপাধ্যায় পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নেন। মাতৃ আরাধনার সমস্ত প্রয়োজনীয় রীতিনীতি নিয়ম নিষ্ঠা মেনে শেখেন। এবছর মেলবোর্নের পুজোয় তিনি নিয়ম নিষ্ঠা মেনে দুর্গাপুজোর পৌরহিত্যের দায়িত্বে সামলাবেন। সুদূর মেলবোর্নে এবছর সত্যি দুর্গাপুজো এক সাম্যের পুজো হয়ে উঠতে চলেছে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপার্বণ