Home দুর্গাপার্বণ দক্ষিণদাড়ি ইয়ুথস, অ্যাসিড আক্রান্তদের লড়াইয়ে আলো ফেলছেন শিল্পী অনির্বাণ

দক্ষিণদাড়ি ইয়ুথস, অ্যাসিড আক্রান্তদের লড়াইয়ে আলো ফেলছেন শিল্পী অনির্বাণ

0

মহাকাব্যে, পুরাণে, ইতিহাসে বারবার নানাভাবে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়েছেন নারীরা। সীতাকেও দিতে হয়েছিল অগ্নিপরীক্ষা। তাতে তাঁর দেহ না জ্বললেও আত্মসম্ভ্রম পুড়ে খাক হয়েছে। আবার দ্রৌপদী অপমানের আগুনে জ্বলেছেন। বর্তমান সময়ও পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলায়নি। একদিকে, আমরা সর্বশক্তিস্বরূপা মা দুর্গার আরাধনা করি আবার নারীদের ওপরই নিরন্তর চলে অত্যাচার। তা সে মানসিক নির্যাতন হোক কিংবা শারীরিক নিগ্রহর ঘটনা। কখনো বা সতীত্বের জ্বলন্ত চিতায় পুড়ে খাক হয় নারীশরীর। কখনো বা ডাইনি সন্দেহে মেয়েদের পুড়িয়ে মারা হয়। আধুনিক সময়ও পরিস্থিতি এতটুকু না বদলে দহনের নতুন রূপ সামনে এসেছে।

অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার মেয়ের মুখ। শুধু মুখ নয়, গোটা অস্তিত্বই। সেই সব অ্যাসিড আক্রান্তদের কথাই দক্ষিণদাড়ি ইয়ুথসে এবার তুলে ধরছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। ২৫ বছরে দক্ষিণদাড়ি ইয়ুথসের মণ্ডপভাবনা হল ‘দহন’। যে-দহন আবহমান। আবার যে-দহন প্রতিরোধের ভাষাও নির্মাণ করছে। যে ভাষ্যের কেন্দ্রে অধিষ্ঠাত্রী স্বয়ং মা দুর্গা।

অ্যাসিড আক্রান্তদের অ্যাসিড-ঝলসানো বীভৎস মুখগুলো যেন হয়ে উঠেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আয়না। আবহমান নিষ্ঠুর ইতিহাস সেই আয়নায় নিজেরই মুখ দেখছে।

কবি শ্রীজাতর লেখা কবিতার উল্লেখ করে বলতে হয়, “দাহ মুছে যাক। দহন জাগুক দাগে।
মহীরুহ গেলে নতজানু হয় ঝড়ও।

ছাই উড়ে যেতে এক মুহূর্ত লাগে।
তোমার আগুন, আকাশের চেয়ে বড়…”

শিল্পী অনির্বাণের কথায়, ‘আমাদের দেশে গড়ে প্রতিবছর ২০০-৩০০টি অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। কমবেশি ৯৫% ঘটনায় অভিযুক্তের সাজা হয় না। ২০০০-২০১৬ সালের মধ্যে পুড়িয়ে মারা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে। যার সিংহভাগই নারী। দেশ জুড়ে প্রতি ঘণ্টায় ঘটছে ৮৬টি ধর্ষণের ঘটনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো বাল্যবিবাহ, নারী পাচার, শিশু-পাচার, গার্হস্থ্য হিংসার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। পণের দাবিতে কেরোসিন ঢেলে নববধূকে জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এর বাইরেও বহুবিধ অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন নারীরা। দহন তো রূপক মাত্র। কখনো তা শরীর পোড়ায়, কখনো মন। কিন্তু এতকিছুর পরও আশার আলো আছে। নারী পিছিয়ে আসছে না।

ফিনিক্স পাখির মতো দহন পরবর্তী ছাইভস্ম থেকেই ফের জেগে উঠছেন নাছোড় ও দুঃসাহসী নারীরা। কন্যা রূপে, দেবী রূপে সর্বভূতে বিরাজমান শক্তিরূপময়ী মা দুর্গারই তেজে তেজোদৃপ্ত হয়ে উঠেছেন কোটি কোটি মানবী দুর্গা।’

নিজস্ব চিত্র

আরও পুজো : হীরক জয়ন্তী বর্ষে বেহালা নূতন দল, দর্শনার্থীদের নিয়ে যাবে রাজা বীর সিংহ ও রাই কুমারীর দেশে

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version