কলকাতা: দেশের বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করল নীতি আয়োগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হারে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশের মধ্যে ১৮ নম্বরে থাকলেও, গত এক দশকের উন্নতির নিরিখে রাজ্যের অবস্থান প্রথম পাঁচের মধ্যে। একইভাবে, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ও লিঙ্গ অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।
এক দশকে ভর্তির হার দ্বিগুণ
নীতি আয়োগের শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সোনিয়া পন্ত জানান, ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সিদের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার হার ২০২১-২২ সালে পশ্চিমবঙ্গে ছিল ২৬.৩ শতাংশ। এক দশক আগে ২০১১-১২ সালে এই হার ছিল মাত্র ১৩.৬ শতাংশ। অর্থাৎ, গত দশ বছরে রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তবে এখনও পশ্চিমবঙ্গ তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ, কেরল, তেলঙ্গানা, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলির তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। যেখানে ওই রাজ্যগুলির ভর্তির হার ৪০ শতাংশের বেশি, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের হার তুলনামূলকভাবে কম।
ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে অগ্রগতি
পশ্চিমবঙ্গে প্রতি ২৯ জন ছাত্রের জন্য এক জন শিক্ষক রয়েছেন। ২০১১-১২ সালে এই অনুপাত ছিল ৩৩। ফলে, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে উন্নতির নিরিখে রাজ্য এখন দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে।
এছাড়া, ছাত্র ও ছাত্রীদের অনুপাতেও উন্নতি করেছে পশ্চিমবঙ্গ। বর্তমানে রাজ্যে ছাত্র-ছাত্রী অনুপাত ১.০৩, যা এক দশক আগে ছিল মাত্র ০.৭৬। এই উন্নতির নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে।
শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দে ঘাটতি
যদিও শিক্ষা পরিকাঠামো ও মানোন্নতির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ উন্নতি করলেও, শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দে রাজ্য পিছিয়ে রয়েছে।
নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের জিডিপি বা জিএসডিপি-র মাত্র ০.৪৩ শতাংশ উচ্চশিক্ষায় ব্যয় হয়। অন্যদিকে, বিহার, অসম, ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, মণিপুর ও মিজোরামের মতো রাজ্যগুলি প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করছে।
নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির হাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজেদের ফি নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণার জন্য পৃথক নীতি তৈরির সুপারিশও করেছে নীতি আয়োগ।
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি
দেশে মোট ৪৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে কর্নাটকে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি রাজ্যে ৩৮টি করে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
তবে, জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে রয়েছে এবং ১৮তম স্থানে রয়েছে। নীতি আয়োগের মতে, রাজ্যে উচ্চশিক্ষার মান আরও উন্নত করতে পরিকাঠামো ও বাজেট বরাদ্দের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
নীতিগত পরিবর্তনের সুপারিশ
উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে নীতিগত পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছে নীতি আয়োগ। এর মধ্যে রয়েছে—
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ফি নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া।
- গবেষণার জন্য পৃথক নীতি প্রণয়ন।
- পরিকাঠামো উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট তহবিল গঠন।
- শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানকে আরও সংযুক্ত করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার ও শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি স্পষ্ট হলেও, অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি ও পরিকাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে এই অগ্রগতি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।