মুম্বই: প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত গজলশিল্পী পঙ্কজ উধাস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে কন্যা নায়ার উধাস বলেছেন, “গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, পদ্মশ্রী শিল্পী পঙ্কজ উধাস ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন।” পঙ্কজ উধাসের মৃত্যুর খবরে দেশের সংগীতজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মঙ্গলবার শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে তাঁর পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে।
পঙ্কজ উধাস বললেই মনে পড়ে যায় সেই বিখ্যাত গানটির কথা – ‘চিঠ্টি আয়ি হ্যায় আয়ি হ্যায় চিঠ্টি আয়ি হ্যায়’। ১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মহেশ ভাট পরিচালিত ‘নাম’ ছবির এই গানটি লিখেছিলেন আনন্দ বকশি এবং সুর দিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল। সহস্রাব্দের ১০০টি শ্রেষ্ঠ গানের অন্যতম হিসাবে এই ‘চিঠ্টি আয়ি হ্যায়’-কে নির্বাচিত করেছিল বিবিসি রেডিও।
তবে শুধু ‘চিঠ্টি আয়ি হ্যায়’ই নয়, বলিউড ফিল্মের বহু গান এবং অ্যালবামের জন্য পঙ্কজ উধাস স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর গাওয়া ‘চাঁদনি জ্যায়সে রঙ হ্যায়’ (ফিল্ম ‘এক হি মকশদ’), ‘জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে’ (ফিল্ম ‘সাজন’), ‘এক পল এক দিন’ (ফিল্ম ‘জিগার’), ‘হোঠোঁ পে তেরি নাম’ (ফিল্ম ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’) ইত্যাদি গান আজও মনের মধ্যে ঝড় তোলে।
সংগীতে আগ্রহ পরিবারের সূত্রেই
১৯৫১ সালের ১৭ মে গুজরাতের জেটপুরে জন্ম পঙ্কজ উধাসের। বাবা কেশুভাই উধাস ও মা জিতুবেন উধাসের তিন সন্তানের মধ্যে পঙ্কজই কনিষ্ঠ। সংগীতের পরিমণ্ডল ছিল তাঁদের পরিবারে। সেই সূত্রেই সংগীতে হাতেখড়ি পঙ্কজের। কেশুভাই পরবর্তী কালে রাজকোটের সংগীত অ্যাকাডেমিতে পঙ্কজকে ভর্তি করে দেন। গোড়ার দিকে পঙ্কজ তবলার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। কিন্তু পরে তিনি গুলাম কাদির খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের পাঠ নিতে থাকেন।
এর পরে পঙ্কজ মুম্বই চলে আসেন। সেখানে গোয়ালিয়র ঘরানার জনপ্রিয় শিল্পী নবরং নাগপুরকরের কাছে সংগীতে তালিম নেন। বলিউডে প্লেব্যাক শিল্পী হিসাবে পঙ্কজের অভিষেক হয় ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান’ ছবিতে। সেই ছবিতে তিনি কিশোর কুমারের সঙ্গে গেয়েছিলেন ‘মুন্নে কি আম্মা ইয়ে তো বতা’। তবে ১৯৮৬ সালে ‘নাম’ ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘চিঠঠি আয়ি হ্যয়’ গানটিই তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয়।
শুধু বলিউডের ফিল্মি গানই নয়, পঙ্কজ উধাসের গাওয়া গানের অ্যালবামের সংখ্যা ৫০টিরও বেশি। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। নাম, ‘আহৎ’। ‘ভালোবাসা’ নামে বাংলা গানেরও অ্যালবাম রয়েছে পঙ্কজের উধাসের। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পঙ্কজ উধাসের পরিবেশিত সংগীত নিয়েও প্রকাশিত হয়েছে অ্যালবাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘পঙ্কজ উধাস লাইভ অ্যাট অ্যালবার্ট হল’ (১৯৮৪)।
সারা জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন পঙ্কজ উধাস। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ২০০৬ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার।
মোদী-মমতার শোকপ্রকাশ
শিল্পী পঙ্কজ উধাসের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘পঙ্কজ উধাসের গজল হৃদয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র তৈরি করত। তিনি ছিলেন ভারতীয় সংগীতের এক উজ্জ্বল শিখা যার আলো প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে। তাঁর প্রয়াণে সংগীতজগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হল, তা কোনোদিন পূর্ণ হবে না।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় গজল সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী পঙ্কজ উধাসের প্রয়াণে আমি দুঃখিত। ওঁর অনুপস্থিতি ভারতীয় সংগীতজগতে একটা বড়ো শূন্যতার সৃষ্টি করবে। ওঁর পরিবার ও অগণিত অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা।’’