Home বিনোদন ‘একমাত্র প্রেম’-এর মৃত্যুতারিখেই প্রয়াত হলেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী-গায়িকা

‘একমাত্র প্রেম’-এর মৃত্যুতারিখেই প্রয়াত হলেন বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী-গায়িকা

বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ও গায়িকা সুলক্ষণা পণ্ডিত বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫-এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সুলক্ষণা পণ্ডিত এবং সঞ্জীব কুমার। ছবি ইউটিউব থেকে নেওয়া।

মুম্বই: দিনটা একই – ৬ নভেম্বর। মাঝখানে কেটে গিয়েছে ৪০টা বছর। ঠিক সেই দিনটিতেই প্রয়াত হলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও গায়িকা সুলক্ষণা পণ্ডিত। আশ্চর্যের বিষয়, ঠিক এই দিনেই ৪০ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন তাঁর জীবনের প্রথম প্রেম এবং একমাত্র প্রেম, অভিনেতা সঞ্জীব কুমার। যাঁর জন্য সুলক্ষণা অবিবাহিতই রয়ে গেলেন।  

সুলক্ষণা পণ্ডিতের অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৭৫ সালে, সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে ‘উলঝন’ ছবিতে। সেই সিনেমার সেটেই তিনি অভিনেতার প্রেমে পড়েন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি অবিবাহিতা ছিলেন — কারণ, সঞ্জীব কুমারই ছিলেন তাঁর একমাত্র ভালোবাসা।

জানা যায়, সুলক্ষণা একসময় সঞ্জীব কুমারকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং তাঁকে মন্দিরেও নিয়ে গিয়েছিলেন বিবাহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সঞ্জীব কুমার নাকি বিয়েতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে তিনি তাঁর নিজের জীবনের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি হৃদরোগে ভুগছেন।  

হানিফ জাভেরির লেখা জীবনী ‘An Actor’s Actor: The Authorized Biography of Sanjeev Kumar’-এ উল্লেখ আছে, সঞ্জীব কুমার কখনও সুলক্ষণার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন না। সঞ্জীব কুমার তখনও অভিনেত্রী হেমা মালিনীর সঙ্গে প্রেমে ব্যর্থতার কষ্ট সামলাচ্ছিলেন। সেই হতাশার সময়েই সুলক্ষণা তাঁর পাশে দাঁড়ান, এবং ধীরে ধীরে তাঁর প্রেমে পড়ে যান।

হেমা মালিনীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সঞ্জীব কুমার ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন, এমনকি মদ্যপানেও আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে হার্ট অ্যাটাকের পর আমেরিকায় অস্ত্রোপচার করান তিনি। ভারতে ফিরে আসার পর সুলক্ষণা তাঁকে আবার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন, কিন্তু অভিনেতা আবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বলিউডের ছবিতে সঞ্জীব কুমার ও সুলক্ষণা পণ্ডিত। ছবি ‘X’ থেকে নেওয়া।

তবুও, সুলক্ষণা তাঁর শেষ দিন পর্যন্ত সঞ্জীব কুমারের পাশে থেকেছেন— তাঁর অসুস্থতা, একাকিত্ব, সবকিছুর সময়ে। ১৯৮৫ সালে সঞ্জীব কুমারের অকালমৃত্যুর পর তিনি গভীর অবসাদে ভুগতে থাকেন। পরের বছরেই মায়ের মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়।

সুলক্ষণা তাঁর জীবনের কঠিন সময় নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ সময় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতজগৎ থেকে দূরে থাকার পেছনে ব্যক্তিগত শোকই ছিল প্রধান কারণ।

সুলক্ষণা বলেন, “আমার কাছে কোনো নতুন চলচ্চিত্রের প্রস্তাব বা গানের সুযোগ আসছিল না। তার মধ্যেই সঞ্জীব কুমার মারা যান। তারপর মা-ও চলে গেলেন, ঠিক সেই সময় যখন তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল আমার। এই মৃত্যু দুটি আমার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। মানসিকভাবে আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম, অনেক দিন ধরে নিজেকে সামলাতে পারিনি।”

তবে এখন তিনি জীবনের নতুন অধ্যায়ে শান্তি খুঁজে পেয়েছেন বলেও জানান। তাঁর কথায়, “আমি সবসময়ই চেয়েছি নিজের একটি পরিবার থাকুক। আমার বোন বিজেতা এখন আমার দেখাশোনা করে। তাঁর স্বামী আদেশ শ্রীবাস্তব আমার কাছে ভাইয়ের মতো। তাঁদের পরিবারের অংশ হতে পেরে এখন আর নিজেকে হারিয়ে যাওয়া মনে হয় না।”

অভিনয়জীবনে সুলক্ষণা পণ্ডিত ‘হেরা ফেরি’, ‘অপনাপন’, ‘খানদান’ এবং ‘ওয়াক্ত কি দেওয়ার’-এর মতো জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন। রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, বিনোদ খান্না, শশী কপূর এবং শত্রুঘ্ন সিনহার মতো খ্যাতনামা অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুলক্ষণা পণ্ডিত অবিবাহিতা ছিলেন এবং তাঁর হৃদয়ে শুধু সঞ্জীব কুমারেরই জায়গা ছিল। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর, ৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সুলক্ষণা। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

বলিউড হারাল এক নীরব প্রেমের প্রতীক, এক অনন্য প্রতিভাকে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version