ধীরে ধীরে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতে হবে না, ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা’। কারণ, এর মধ্যেই গুটিগুটি পায়ে হাজির হচ্ছে শীত। কমছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। হালকা ভাবে ঠান্ডার শিরশিরানি টের পাওয়া যাচ্ছে। শীত আসতেই হাজির হচ্ছে শীতের অতিথি পরিযায়ী পাখি।
শীতের সময় হাজার হাজার মাইল উড়ে পরিযায়ী পাখিরা হাজির হয় বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। জলাশয় হোক কিংবা গাছ, জমি, চারিদিক পাখিদের কলকাকলিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কোথা থেকে আসে এ সব পরিযায়ী পাখিরা? কোথায় বা যায় তারা? যাত্রার মাঝে কোথায় তারা বিশ্রাম নেয়? কত দিন ধরে টানা ওড়ে? এ সব রহস্যের সমাধান হয়নি এখনও। জানা যায়নি এ সব প্রশ্নের উত্তর। পরিযায়ী পাখিদের গোপন কথা জানতে তাই এ বার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিযায়ী পাখিদের যাত্রাপথের রুট জানতে তাই মণিপুরে উড়ে আসা আমুর ফালকন নামে বিশেষ রকমের পরিযায়ী বাজপাখির সাহায্য নিয়েছেন ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (WII, ডব্লিউআইআই) বিজ্ঞানীরা।
মণিপুরের পশ্চিম তামেংলং জেলায় রাজ্যের মুখ্য বন্যপ্রাণী আধিকারিক অনুরাগ বাজপেয়ীর অনুমতিসাপেক্ষে দুটি আমুর ফ্যালকন বাজপাখির নাম দেওয়া হয় চিউলান-২ ও গুয়ানগ্রাম। ওই দুটি আমুর ফ্যালকনের পায়ে লাগানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার। অসম ও নাগাল্যান্ডের সীমানাবর্তী তামেংলং-এর চিউলান-২ আর গুয়ানগ্রাম গ্রামে প্রতি বছর শীতে হাজির হয় পরিযায়ী পাখিরা। তাই ওই দুই গ্রামের নামেই নাম দেওয়া হয় আমুর ফ্যালকনের। তামেংলং জেলায় ১১টি আমুর ফ্যালকনকে ধরা হয়। তার পর তাদের গলায় রিং পরানো। দুটি পাখির পায়ে লাগানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে এটা করা হয়েছে।
ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা দেখেন, আমুর ফ্যালকন নামক বাজপাখি ২২ হাজার কিলোমিটার ওড়ে। পূর্ব এশিয়া থেকে ওড়া শুরু হয়। চিনে ডিম পাড়ে। সেখানে এক ১ মাস কাটিয়ে ভারতে আসে। তার পর উড়ে যায় লাতিন আমেরিকার দিকে। সেখান থেকে ফের তারা শীতের আগে পাড়ি দেয়। এ ভাবেই চক্রাকারে ঘোরে তাদের জীবন। স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার নামক বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন চক্রাকারে কতটা ওড়ে এই বিশেষ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।