Homeশরীরস্বাস্থ্যস্ট্রেস কমাতে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে জুড়ি মেলা ভার অ্যারোম্যাটিক কারিপাতার

স্ট্রেস কমাতে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে জুড়ি মেলা ভার অ্যারোম্যাটিক কারিপাতার

প্রকাশিত

সবুজ সবুজ কারিপাতার ফোঁড়ন বিনা দক্ষিণ ভারতীয় রান্না অসম্পূর্ণ। রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি সুন্দর অ্যারোমাযুক্ত কারিপাতায় আছে অসংখ্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণও। চতুর্থ শতকে প্রাচীন তামিল পুঁথিতেও উল্লেখ আছে কারিপাতার।

দক্ষিণ ভারতীয় বা এশিয়ান রান্নায় অপরিহার্য কারিপাতার ব্যবহার হয় আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি চিকিৎসাতেও। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রেস কমাতে, ওজন হ্রাস করতে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ভীষণ ভাবে কার্যকর কারিপাতা। আধুনিক জীবনের অঙ্গ হল স্ট্রেস। সুন্দর অ্যারোমাযুক্ত কারিপাতা স্ট্রেস কমিয়ে শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে।

কারিপাতায় কী আছে       

কারিপাতায় পাওয়া যায় ম্যাগনেশিয়াম, ক্যারোটিন, রাইবোফ্লেভিন, নায়াসিন, ভিটামিন সি, লোহা আর ফলিক অ্যাসিড। অ্যালকালয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, ফেনোলিক, লিনালুল, আলফা-টেরপিনিন, মিরসিন, মহানিম্বিন, কারিওফিলিন, মুরিয়ানল, আলফাপিনিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ কারিপাতা। 

কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা, মাল্টিভিটামিন আর ফ্ল্যাভোনয়েডে ভরপুর কারিপাতা রক্তাল্পতা (অ্যানেমিয়া), ডায়াবেটিস, হজমে সমস্যা, স্থুলতা, কিডনি, চুল ও ত্বকের সমস্যা নিরাময় করতে সক্ষম।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় কারিপাতা

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় কারিপাতাকে বলা হয় কৃষ্ণনিম। তিক্ত আর কষা কারিপাতা থেকে পাওয়া এসেন্সিয়াল অয়েল আয়ুর্বেদে চুল ও ত্বকের সমস্যা, ডায়াবেটিস, চোখের স্বাস্থ্য, দাঁতের রোগ, ডায়েরিয়া সারাতে কাজে লাগে। ঘন কালো লম্বা চুল পেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর পুষ্টিকর কারিপাতা খুবই উপকারী। আগেকার দিনে কারিপাতার কচি ডাল দাঁতন হিসাবে ব্যবহার হত। যা শুধু দাঁত আর মাড়িকেই মজবুত করত না, ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া, জীবাণুর থেকেও রক্ষা করত। আয়ুর্বেদে গোটা কারিপাতা বা পাতার গুঁড়োকে দাঁতের গুঁড়োমাজন হিসাবে ব্যবহার করার নিদান দেওয়া হয়েছে।

নানা রোগ প্রতিরোধে কারিপাতা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারিপাতা। নিয়মিত কাঁচা অথবা কারিপাতার জুস খেলে সব টক্সিন বের করে দেয়। ফ্যাট ঝরিয়ে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, হজমশক্তি বাড়িয়ে তোলে।

কারিপাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার যা ডায়েরিয়া ও গা বমি-বমি ভাবের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রোটিনে সমৃদ্ধ কারিপাতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও মজবুত করে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি ক্যালসিয়াম। কারিপাতাকে এককথায় বলা হয় পাওয়ারহাউজ অফ ক্যালসিয়াম। দাঁত ও হাড়কে মজবুত করার পাশাপাশি কারিপাতা অস্টিওপরোসিস, অস্টিওম্যালাসিয়ার মতো হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কারিপাতায় থাকা ফসফরাস কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে, পেশির ফোলা ভাব কমায় কারিপাতা।

একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভোলাটাইল এসেন্সিয়াল অয়েলের পাওয়ারহাউজ এই কারিপাতা। এসব এসেন্সিয়াল অয়েলে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমাটরি, অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়া, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণাবলি। চুল, ত্বক, মুখের হাইজিনের জন্য খুবই সহায়ক এসেন্সিয়াল অয়েল সমৃদ্ধ কারিপাতা। হাইপারগ্লাইসেমিয়া, উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম কারিপাতা।

কারিপাতার গ্লাইসেমিক গুণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্যানক্রিটিক বিটা সেলে থেকে উৎপন্ন ইনসুলিন সক্রিয় হয়ে ওঠে নিয়মিত কারিপাতা খেলে। স্টার্চ ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হওয়াও আটকায় কারিপাতা। লোহার অভাবে ঘটে রক্তাল্পতা। কারিপাতায় প্রচুর পরিমাণে লোহা থাকায় তা হিমোগ্লোবিন আর রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। স্বাভাবিক রক্তশোধক কারিপাতা খেলে ক্লান্তি ভাব কাটে। কারিপাতায় থাকা ভিটামিন এ আর বিটা ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থ্যর জন্য খুবই জরুরি।

কারিপাতায় থাকা কার্বাজল অ্যালকালয়েডস কমায় খারাপ কোলেস্টেরল।

প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালয়েড থাকায় কারিপাতা হার্টের জন্য খুবই জরুরি। এটা শুধু হৃৎপিণ্ডকেই সুস্থ রাখে না, হৃৎপিণ্ডের পেশিকেও মজবুত করে। বুকে সর্দি জমা আটকায় কারিপাতা। শুকনো কাশি, সাইনাস, মাথার যন্ত্রণা, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিসের মতো শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করে।

চুলের সুস্বাস্থ্য ফেরাতে কারিপাতা

এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত চুলের সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে কারিপাতা। খুশকির সমস্যা দূর করে, গোড়া থেকে চুলকে মজবুত করে। চুল পড়া আটকায়। ভিটামিন সি আর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কারিপাতা সুন্দর স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়ার জন্য খুবই দরকারি। ত্বকের ট্যানিংও আটকায়। নিয়মিত কারিপাতার তেল আর জোজোবা অয়েল মিশিয়ে ত্বকে মাসাজ করলে রিঙ্কলস, ডার্ক সার্কেলের সমস্যা করে। কেমোথেরাপি আর রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায় কারিপাতা। অস্থিমজ্জাকে সুরক্ষিত রাখে। রুক্ষ আর শুষ্ক চুলের ডিপ কন্ডিশনিংয়ের কাজ করে কারিপাতার তেল। গর্ভাবস্থায় অনেকেরই বমি বমি ভাব হয়, কারি পাতা সেই সমস্যা দূর করে। কাটা, ছেঁড়া, জ্বালাপোড়ার ক্ষেত্রে কারিপাতার পেস্ট লাগালে শুধু নিরাময়ই করে না তা সংক্রমণও প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুন

তেঁতুল জলেই ঝরুক মেদ, তেঁতুলে ঠেকান ডায়াবেটিস, সারান পেপটিক আলসার

আপনার প্রশ্ন, আমাদের উত্তর

সাম্প্রতিকতম

সোনালী সহ ৬ জনকে বাংলাদেশে থেকে ফেরানো নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে সুনালি খাতুন ও আরও পাঁচজনকে বাংলাদেশ থেকে ফেরানোর নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্র। গর্ভবতী সুনালি ও দুই শিশুসন্তানসহ পরিবারের দুরবস্থা নিয়ে আলোড়ন।

শাহবাজের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে গুজরাতকে চাপে ফেলল বাংলা

কলকাতা: পাঁচ মাসের বিরতির পর চোটমুক্ত হয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করলেন বাংলার শাহবাজ আহমেদ। ডান...

বাংলায় শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন, সোমবারই ঘোষণা কমিশনের — ১ নভেম্বর থেকে ঘরে ঘরে বিএলও

নির্বাচন কমিশন সোমবার ঘোষণা করবে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)-এর দিনক্ষণ। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৫টি রাজ্যে মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু। ১ নভেম্বর থেকে বাড়ি বাড়ি যাবেন বিএলও।

অস্ত্র-সহ আলফা (স্বাধীন)-এর সদস্য গ্রেফতার, উদ্ধার আরপিজি ও বিপুল গোলাবারুদ

অরূপ চক্রবর্তী, গুয়াহাটি: নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে আবার ধরা পড়ল আলফা (স্বাধীন) সংগঠনের এক দুর্ধর্ষ ক্যাডার।...

আরও পড়ুন

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জিরে ভেজানো জল খাবেন কেন? জানুন আশ্চর্য উপকারিতা

জিরে ভেজানো জল শুধু হজম নয়, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ঘুমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটিও দূর করে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জিরে জল খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন বিস্তারিতভাবে।

শহুরে ভারতীয়রা মিষ্টিপ্রেমী হয়ে উঠেছে! সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

সমীক্ষায় জানা গেছে, ভারতের ৫১% শহুরে পরিবার মাসে অন্তত ৩-৪ বার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খান। তবে ৫৫% নাগরিক এখন পছন্দ করছেন কম চিনি দেওয়া মিষ্টি। ডায়াবেটিস ও কৃত্রিম শর্করার ঝুঁকি নিয়েও সতর্ক বিশেষজ্ঞরা।

এক চিকিৎসকের আট বছরের লড়াইয়ে বড় জয়, ভুয়ো ওআরএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল FSSAI, আসল চিনবেন কী করে?

হায়দরাবাদের শিশু-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে বড় পদক্ষেপ নিল FSSAI। WHO-র নির্ধারিত মান না মেনে ‘ORS’ নামে বিক্রি হওয়া পানীয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। শিশুদের জন্য বিপজ্জনক এই মিষ্টি পানীয় নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর আইনি লড়াই প্রায় এক দশক আগে।