Home শরীরস্বাস্থ্য সজনে: শরীর সুস্থ রাখতে এমন বন্ধু আর কে আছে

সজনে: শরীর সুস্থ রাখতে এমন বন্ধু আর কে আছে

0

সজনেকে এক কথায় বলা যায় ‘মিরাকল ট্রি’। ফুল, ডাঁটা, পাতা, শিকড়, বীজ – কোনো কিছুই ফেলনা নয় সজনের। শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে সজনের জুড়ি মেলা ভার। প্রচুর ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ সজনে। সজনেগাছের ইংরেজি নাম ‘মোরিঙ্গা ট্রি’ বা ‘ড্রামস্টিক ট্রি’। মূলত এশিয়া, আফ্রিকা আর দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায় সজনেগাছ।

সজনে পাতা

(১) পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সজনেগাছের পাতা। গাজর, কমলালেবু, দুধের চেয়েও বেশি পুষ্টি সজনের পাতায়৷ ভিটামিন এ, সি, থায়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন আর নায়াসিন, বি৬, ফোলেটে সমৃদ্ধ এই সজনেপাতা। ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও দস্তাও আছে প্রচুর পরিমাণে পাতায়। এক কাপ পাতায় প্রায় ২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। অ্যামাইনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ এই সজনের পাতা। ১৮ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায় সজনেপাতায়। ভুল জীবনযাপন আর ভুল খাদ্যাভ্যাসের জন্য শরীরে ফোলাভাব বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি ফোলাভাব থাকলে তার থেকে ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখে যায়। ক্যানসার, আর্থরাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থরাইটিসের মতো বহু অটোইমিউন রোগের মূলে আছে এই ফোলাভাব। আইসোথাইয়োসায়ানেটের মতো পদার্থ থাকায় সজনের পাতা ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

(২) টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অ্যালঝাইমার্সের মতো বহু ক্রনিক রোগের জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিক্যাল্‌স। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ সজনেপাতা এ সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। কোয়ের্সেটিন নামে সজনেপাতায় থাকা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ কমায় আর ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রচুর পরিমাণে আইসোথায়োসায়ানেট থাকে সজনের পাতায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় সজনেপাতা।

(৩) টিবিতে আক্রান্ত হলে দীর্ঘ সময় টিবির ওষুধ খেলে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। লিভার বা যকৃতের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সব ক্ষতি মেরামত করে সজনেপাতা। প্রচুর ফলিফেনল থাকায় পাতা লিভারের অক্সিডেটিভ ক্ষতি মেরামত করে। লিভারের প্রোটিনের মাত্রা বাড়ায়। লিভারের উৎসেচক নিঃসরণ ঠিক থাকলে তবে লিভার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। সজনেপাতা এই উৎসেচকের নিঃসরণ স্বাভাবিক রাখে।

(৪) দীর্ঘদিন ধরে শরীরে আর্সেনিক ঢুকলে ক্যানসার, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সজনেপাতা আর্সেনিক বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। অ্যান্টিবায়োটিক আর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাবলি থাকে বলে যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অম্বল, বদহজম, আলসার, কোলাইটিসের সমস্যায় ভোগেন নিয়মিত ডায়েটে রাখুন সজনেপাতা। ভিটামিন বি হজমে সহায়তা করে। অ্যান্টিসেপ্টিক সজনেপাতা কাটা, ছেঁড়া, জ্বালাপোড়ার থেকে উপশম দেয়। প্রোটিন, ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ সজনেপাতা সদ্যপ্রসূতি মা আর তাদের সদ্যোজাত সন্তানদের জন্য খুবই উপকারী। চর্বি গলিয়ে দেয় বলে স্থুলকায় হওয়ার সমস্যা দূর করে সজনেপাতা।

(৫) ৩০ রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে সজনেপাতায় যা চুল আর ত্বক ভালো রাখে। সজনেপাতা বেটে মাথায় লাগালে খুশকির সমস্যা দূর হয়, নিষ্প্রাণ চুলে বাউন্স ফিরে আসে। প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে চুল। ব্রণর সমস্যা দূর হয, স্কিনটোন উজ্জ্বল হয়। এ ছাড়া মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে ডায়েটে রাখুন সজনেপাতা। ভিটামিন ই আর সি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। প্রাকৃতিক ক্লিনজার সজনেপাতা শরীর থেকে টক্সিন বের করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আর এনার্জি লেভেলও বাড়িয়ে তোলে।

সজনে ফুল  

অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর সজনে ফুল। সাদা সাদা ফুল ক্যালসিয়াম আর পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া আছে প্রচুর ভাইটাল অ্যামাইনো অ্যাসিড। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়, ঠান্ডা লাগার ধাত কমায় সজনে ফুল। রেচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে সজনে ফুল, তাই কিডনির সমস্যা অনেকাংশে দূর করে। অনেকের ঠান্ডা লাগার ধাত থাকে, সে ক্ষেত্রে সজনে ফুলের রস খেলে উপশম মেলে। সজনে ফুলে টেরিজোস্পার্মিন নামে একটি পদার্থ পাওয়া যায় যা স্পার্ম কাউন্ট বাড়ায়, বন্ধ্যত্বর সমস্যা, ইরেকটাইল ডিসফাংশনের মতো রোগ দূর করে। ‘ইন্ডিয়ান ভায়াগ্রা’ নামে পরিচিত সজনে ফুলকে রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমের জন্য পারফেক্ট টনিক বলা হয়।

সজনে ডাঁটা

(১) সজনে ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ আছে তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের সজনে ডাঁটা খেতে বলা হয়।

(২) রক্তকে শোধন করে টক্সিন বের করে দেয় সজনে ডাঁটা। তাই ব্রণ-সহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করে। মার্চ-এপ্রিল মাসে বসন্ত, হাম প্রভৃতি জীবাণু সংক্রমণ হয়। সজনে ডাঁটা এ সব রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

(৩) সুপার পাওয়ারফুল সবজি সজনে ডাঁটা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগের আশঙ্কা দূর করে। ভিটামিন এ ও সি, ফলিক অ্যাসিড আর গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ আছে বলে ডাঁটা খেলে চুল আর ত্বকও ভালো থাকে। সজনের বীজ থেকে তৈরি তেল চুলকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল্‌স থেকে দূরে রাখে। চুল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। ডাঁটায় থাকা প্রোটিন ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। হাইড্রেটিং আর ডিটক্সিফাইয়িং পদার্থ আছে যা ত্বক আর চুল ভালো রাখে।         

(৪) প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস আর লোহা থাকায় হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে ডাঁটা। বিশেষত বয়স্ক মানুষদের বোন ডেনসিটি বাড়ায়। ডাঁটায় থাকা নায়াজিমিন নামে পদার্থ ক্যানসারের কোষ তৈরি হওয়া আটকায়।

(৫) সজনে ডাঁটা মানসিক অবসাদ, ক্লান্তিভাব, মানসিক অস্থিরতা রোধ করে। হার্টকে সুস্থ রাখে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। কচি ডাঁটায় থাকে ওলেইক অ্যাসিড নামে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড যা হার্টকে ভালো রাখে। অ্যাজমা আর ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা দূর করে। কিডনি, ব্লাডার, জরায়ুতে স্টোন কম হয় নিয়মিত ডাঁটা খেলে। ধমনী মোটা হয়ে গেলে রক্তচাপ বাড়ে। ডাঁটায় থাকা আইসোথায়োসায়ানেট আর নায়াজিমিন নামে ২টি পদার্থ ধমনীর মোটা হয়ে যাওয়া রোধ করে। রক্ত চলাচল ঠিক রাখে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সজনেডাঁটা। 

(৬) থায়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নায়াসিন ও ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ সজনেডাঁটা হজমশক্তি বাড়ায়। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করে। ই-কোলি, সালমোনেল্লা, রাইজোপাসের মতো ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম ডাঁটা। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলে ডাঁটা। রেটিনার ক্ষমা হওয়া আটকায়। আমাদের শরীর যাতে বেশি করে লোহা শুষে নিতে পারে তাতে সহায়তা করে ডাঁটা। রক্তের লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version