Home খবর দেশ এক চিকিৎসকের আট বছরের লড়াইয়ে বড় জয়, ভুয়ো ওআরএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি...

এক চিকিৎসকের আট বছরের লড়াইয়ে বড় জয়, ভুয়ো ওআরএস-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল FSSAI, আসল চিনবেন কী করে?

খবর অনলাইন ডেস্ক: হায়দরাবাদ-নিবাসী শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষ-এর আট বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে ভারতীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও মান সংস্থা (FSSAI) বড় পদক্ষেপ নিল।

এখন থেকে কোনও খাদ্য ব্র্যান্ডই তাদের পণ্যের লেবেলে ‘Oral Rehydration Salts’ বা ‘ORS’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না, যদি না সেই পণ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রস্তুত হয়।

এই নির্দেশিকা ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত হয় এবং এর ফলে আগের সমস্ত ছাড়পত্র ও অনুমোদন সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিশেষত, ১৪ জুলাই ২০২২ এবং ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর দুটি পুরনো নির্দেশ বাতিল করা হয়েছে, যেগুলিতে আংশিক অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ব্র্যান্ড নামের সঙ্গে ‘ORS’ ব্যবহার করার, শর্ত ছিল লেবেলে “Not a WHO-recommended ORS formula” লেখা থাকতে হবে।

 ভুল লেবেলিং নিয়ে কড়া ব্যবস্থা

FSSAI-র মতে, ‘ORS’ শব্দটি ব্যবহার করে ফল-ভিত্তিক, নন-কার্বনেটেড বা রেডি-টু-ড্রিঙ্ক পানীয় বিক্রি করা সরাসরি Food Safety and Standards Act, 2006-এর লঙ্ঘন।

এই ধরনের লেবেলিং গ্রাহকদের ভুল পথে পরিচালিত করে, কারণ তা ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং অস্পষ্ট তথ্য প্রদান করে। ফলে, এই ধরনের পণ্য এখন থেকে অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।

 একজন চিকিৎসকের একক লড়াই

এই সিদ্ধান্তের পেছনে আছেন একজন চিকিৎসক—ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষ, যিনি প্রায় এক দশক আগে থেকেই সতর্ক করতে শুরু করেন যে, বাজারে প্রচলিত বহু পানীয় ভুলভাবে ‘ORS’ নামে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, এই পানীয়গুলির মধ্যে অতিরিক্ত চিনি থাকা সত্ত্বেও তা শিশুদের ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।

২০২২ সালে তিনি তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দায়ের করেন, যেখানে তিনি প্রশ্ন তোলেন—WHO-র নির্ধারিত মানদণ্ড না মেনেও কীভাবে কিছু সংস্থা নিজেদের পণ্যকে ‘ORS’ হিসেবে বিক্রি করতে পারে?

 WHO নির্ধারিত আসল ORS-এর মান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, আসল ORS-এর মোট অসমোলারিটি হওয়া উচিত ২৪৫ mOsm/L, এবং তাতে থাকতে হবে —

  • সোডিয়াম ক্লোরাইড: ২.৬ গ্রাম
  • পটাশিয়াম ক্লোরাইড: ১.৫ গ্রাম
  • সোডিয়াম সাইট্রেট: ২.৯ গ্রাম
  • ডেক্সট্রোজ (চিনি): ১৩.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জল

অন্যদিকে, অনেক তথাকথিত ORS পানীয়তে প্রতি লিটারে প্রায় ১২০ গ্রাম চিনি থাকে, যার মধ্যে ১১০ গ্রামই যোগ করা চিনি
তাছাড়া, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ WHO-র তুলনায় অনেক কম—ফলে এই পানীয় আসলে রিহাইড্রেশন নয়, ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়

 ডা. শিবরঞ্জনীর প্রতিক্রিয়া

FSSAI-র এই নির্দেশের পর ডা. সন্তোষ বলেন, “এটি এক ব্যক্তির নয়, জনগণের জয়। আট বছর লড়েছি, তিন বছর আদালতে, এবং পাঁচ বছর ধরে প্রশাসনিক উদাসীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। ডাক্তার, মা, অ্যাডভোকেট, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার—সবাই মিলে এই জয় সম্ভব হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “শিশুদের মৃত্যু না হলে হয়তো এই পরিবর্তন আসত না। সময় এসেছে, চিকিৎসকেরা শিশু মৃত্যুর রিপোর্টে দেখে লিখুন—কোন পানীয় দেওয়া হয়েছিল।”

 আসল ORS চেনার উপায়

ডা. সন্তোষ পরামর্শ দিয়েছেন,
১️. ফর্মুলা মিলিয়ে দেখুন — WHO-র নির্দেশিত সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও গ্লুকোজ পরিমাণ উল্লেখ আছে কি না।
২️. চিনি বিকল্প এড়িয়ে চলুন — মনক ফ্রুট, স্টিভিয়া ইত্যাদি বিকল্প নয়, এগুলি রিহাইড্রেশন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে।
৩️. অতিরিক্ত উপাদানবিহীন পণ্য বেছে নিন — ফলগুঁড়ো বা হারবাল মিশ্রণ ORS নয়।
৪️. বিশ্বস্ত ফার্মেসি থেকে WHO-অনুমোদিত স্যাশে কিনুন।

সমস্যার সামাজিক প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর অনেক ক্ষেত্রেই এই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় ভূমিকা রাখছে, কিন্তু সেটি সরকারি রিপোর্টে প্রতিফলিত হয় না। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কেবল “ডায়রিয়া ও ডিহাইড্রেশন” লেখা হয়, অথচ মূল দোষী হতে পারে এই ভুয়ো ORS পানীয়।

জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সাফল্য

এই রায় শুধু এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং একটি জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সাফল্য।  এখন থেকে কোনও সংস্থা WHO অনুমোদিত ফর্মুলা না মেনে ‘ORS’ শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না। এটি ভারতের খাদ্যনিরাপত্তা ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত—যা ভবিষ্যতে শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

আরও পড়ুন: ‘জিরো ক্যালরি’ ঠান্ডা পানীয় কি সত্যিই নিরাপদ? নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য, বাড়ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version