শহুরে জীবনের স্ট্রেস, চাকরিক্ষেত্রের চাপ, আর ‘কুল’ ইমেজের মোহ—এই তিনেই আটকা পড়ছেন শহরের তরুণীরা। কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সিস্টেমস-এর এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী শহুরে তরুণী ও মহিলাদের প্রায় ১২% ধূমপান বা অন্য কোনওভাবে তামাক ব্যবহার করছেন। সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র তথ্যানুসারে, ধূমপানকারী মহিলাদের স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসার ও বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, তামাকের ক্ষতি লিঙ্গনিরপেক্ষ হলেও মহিলাদের শরীরে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (NFHS)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলায় প্রতি দুই জন পুরুষের একজন ও প্রতি দশ জন মহিলার একজন ধূমপায়ী। কলকাতায় চিত্র আরও ভয়ঙ্কর—পুরুষদের মধ্যে ৮২% এবং মহিলাদের মধ্যে ২৩.৫% তামাক ব্যবহার করেন, যা দেশের সমস্ত মেট্রো শহরের মধ্যে সর্বাধিক।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বিপি পোদ্দার হাসপাতালের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিষেক কল্যাণ বলেন, “মহিলারা তামাকের ক্যানসারজনক প্রভাবে বেশি সংবেদনশীল। হরমোন ও জেনেটিক পার্থক্য এর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। ক্যানসারের পাশাপাশি স্ট্রোক, বন্ধ্যাত্ব ও গর্ভাবস্থাজনিত জটিলতার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।”
বিরলা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ-এর ডা. আহেলি মাইতির মতে, “তামাক ডিম্বাশয়ের রক্ত চলাচল কমায়, হরমোনে প্রভাব ফেলে এবং ডিম্বাণুর মান নষ্ট করে। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।”
ফর্টিস হাসপাতালের পালমোনোলজির ডিরেক্টর ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরী আরও বলেন, “শহরের কর্মজীবী মহিলাদের মধ্যে ধূমপান বাড়ছে মূলত অফিসের চাপ, সহকর্মীদের প্রভাব বা ‘স্বাধীনতা’র ভাবমূর্তির কারণে। একবার শুরু করলে অনেকেই সহজে ছাড়তে পারেন না।”
বিশেষজ্ঞদের মত, এই প্রবণতা রুখতে তামাকবিরোধী আইন আরও কঠোর প্রয়োগ করা জরুরি। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমানোর ব্যবস্থা, কাউন্সেলিং এবং সহজে প্রাপ্য ‘স্মোকিং সিসেশন’ প্রোগ্রাম চালু করাও প্রয়োজন।
ডা. মাইতির মতে, “তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে—ধূমপান কোনও স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং নিঃশব্দে শরীরকে দুর্বল করে দেওয়ার অস্ত্র,”।
আরও পড়ুন: রাতে ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্নে? অবহেলা নয়, লুকিয়ে থাকতে পারে মানসিক বিপদ