কোন সাপ কামড়েছে? কালাচ, চন্দ্রবোড়া, কেউটে না গোখরো—এই তথ্য জানা না গেলে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা শুরুতে সময় নষ্ট হয়। ফলে রোগীর জীবনের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই যৌথ গবেষণা শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর এবং কল্যাণী এইমস।
মূল গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন সর্পাঘাতের বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা রাজ্যের রিসোর্স পার্সন ও প্রশিক্ষক ডাঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরুণ চিকিৎসক ডাঃ শুভেন্দু বাগ, এবং এইমস কল্যাণীর সংক্রামক রোগ চিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডাঃ সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিকিৎসকদের লক্ষ্য, ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো সাপের কামড়ের ক্ষেত্রেও একটি র্যাপিড ডিটেকশন কিট তৈরি করা। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে সাপে কাটা রোগীর ক্ষেত্রে ‘২০ মিনিটের টেস্ট’ করা হয়—রক্ত জমাট বাঁধলে বোঝা যায় বিষ ঢোকেনি, জমাট না বাঁধলে ‘এনভেনোমেশন’ হয়েছে। কিন্তু বিশেষত চন্দ্রবোড়ার কামড়ে অনেক সময় প্রভাব ধরা পড়তে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। ততক্ষণ অ্যান্টিভেনম না দেওয়া মানে কার্যত রোগীকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। আবার ভুল পরীক্ষার ফলে অযথা এভিএস ব্যবহার করলে জীবনদায়ী ইনজেকশন অপচয় হয়।
এই দ্বিধা দূর করতেই নতুন কিট তৈরির প্রচেষ্টা। গবেষণায় প্রথমে সাপে কাটা রোগীর রক্তরস বা প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। কোল্ড চেন বজায় রেখে তা পাঠানো হবে কল্যাণী এইমসের গবেষণাগারে। বিষধর সাপ কামড়ালে মানবরক্তে মিশবে তার অ্যান্টিজেন। বিশেষভাবে তৈরি কিটের অ্যান্টিবডি সেই অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়া হবে। তখনই দ্রুত বোঝা যাবে, কোন সাপ কামড়েছে।
ডাঃ দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে অর্থসাহায্য করছে রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতর। ইতিমধ্যে কয়েকজন সাপে কাটা রোগীর রক্তরস গবেষণার জন্য কল্যাণী পাঠানো হয়েছে বলেও জানালেন ডাঃ শুভেন্দু বাগ।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই গবেষণা শুধু দ্রুত চিকিৎসাই নয়, ভবিষ্যতে সর্পাঘাতের টিকা তৈরির ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
আরও পড়ুন: ম্যারাথনে বাড়তে পারে কোলোন ক্যানসারের ঝুঁকি, তবে নিয়মিত দৌড়েই মিলবে সুরক্ষা— দাবি গবেষণার