আমরা প্রত্যেকেই শুনেছি সূর্যের আলো ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে মন খুশিতে ভরে ওঠে। সূর্যের আলো আর অন্ধকারের সঙ্গে হরমোন নিঃসরণের সরাসরি সম্পর্ক আছে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে সেরোটোনিন নামে একটি হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। এই হরমোন মুড ভালো রাখে। মানসিক শান্তি লাভ হয়, একাগ্রতা বাড়ায় সেরোটোনিন হরমোন।
অন্য দিকে রাতে অন্ধকারে মেলাটোনিন হরমোন বেরোয়। এই হরমোন ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না পেলে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। কম মাত্রার সেরোটোনিন হরমোনের সঙ্গে ‘সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’ বা (SAD) নামে এক ধরনের মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের সম্পর্ক আছে।
সূর্যের আলো চোখের মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢোকে। সূর্যের আলো চোখের মধ্যে থাকা রেটিনার বিশেষ বিশেষ অংশকে জাগিয়ে তোলে। এর ফলে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। শুধু সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার নয়, বিভিন্ন রকমের মানসিক অবসাদ, প্রিমেনস্ট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিজঅর্ডার (পিএমডিডি), অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের যে মানসিক অবসাদ হয় তা-ও কাটাতে সাহায্য করে সূর্যের আলো।
বিভিন্ন রকমের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সূর্যের আলো কম হওয়া ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে প্যানিক অ্যাটাক-সহ নানান রকমের দুশ্চিন্তাঘটিত মানসিক সমস্যার। আমাদের শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করে সূর্যের আলো থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য অনুযায়ী সপ্তাহে ২-৩ বার মিনিট ১৫ করে গা, হাত, পা আর মুখে সূর্যের আলো লাগালেই তৈরি হয়ে যাবে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি।
যে কোনো বয়সে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হতে পারে। তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধে ভিটামিন ডি থাকে। তবে খাবার খেলেই মিটবে না ভিটামিন ডি’র ঘাটতি। গায়ে লাগাতে হবে রোদ। বিভিন্ন রকমের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন ডি কম থাকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে মানসিক অবসাদের। মস্তিষ্কের যে অংশ অবসাদের জন্য দায়ী সেখানে থাকে ভিটামিন ডি’র জন্য প্রচুর রিসেপ্টর।
দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে বলে মনে করা হয়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পেলে রোধ করা সম্ভব কোলোন ক্যানসার, হজকিনস লিম্ফোমা (Hodgkin Lymphoma), ওভারিয়ান ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসারের মতো বিভিন্ন রকমের ক্যানসারকে। হু’র তথ্য অনুযায়ী, সূর্যের আলো সোরিয়াসিস, একজিমা, অ্যাকনের মতো ত্বকের রোগ ছাড়াও জন্ডিস, রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, থাইরয়েডিটিসের মতো রোগ সারাতে সাহায্য করে।