বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি থেকে সরে আসতে রাজি নয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার দলের শীর্ষ নেতারা স্পষ্ট করেছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে তাঁরা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ছাত্রনেতাদের একাংশ ‘আওয়ামী লীগের দালালি’ করার অভিযোগ তোলার পর বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ঢাকার সেনানিবাস গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। তবে এনসিপির প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লা ও সার্জিস আলম সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ় জামানের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, তবে পুরো দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তাঁদের সমর্থন নেই। সেনার এই অবস্থান প্রকাশ্যে আসার পর এনসিপির কিছু নেতা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।
তবে, এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, তাঁদের দল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে অনড় থাকবে। তিনি বলেন, “আমরা বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছি।”
সেনার পাশে আমেরিকা, কূটনৈতিক সমীকরণে নয়া মোড়
এনসিপি-সেনা বৈঠকের মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন সেনার প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল জোয়েল পি বাংলাদেশ সফরে এসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ় জামানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর বুধবার মার্কিন দূতাবাস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের সামরিক চ্যালেঞ্জ ও নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
✅ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে প্রশংসা করেছে মার্কিন প্রশাসন।
✅ বিপর্যয় মোকাবিলা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমেরিকা।
✅ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।
একই দিনে চিন সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস
একই দিনে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চিন সফরে গেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে এটি তাঁর প্রথম দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফর।
শুক্রবার তাঁর চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ইউনূস এশিয়ার দেশগুলোর যৌথ উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে আমেরিকা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সমর্থনের বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চিনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাইছেন। ফলে ঢাকার বিদেশনীতি নতুন কূটনৈতিক সমীকরণের দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।