কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে অশান্ত বাংলাদেশ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ঢাকার রাজপথে এখনও পুলিশি টহল জারি রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জওয়ান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত গোটা দেশে ১৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে। ধৃতদের তালিকায় রয়েছেন বিএনপি ও জামাতের বেশ কয়েকজন নেতাও।
আংশিক শিথিল হলেও বাংলাদেশে এখনও জারি রয়েছে কার্ফু। বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী কার্ফুর ষষ্ঠ দিন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিনের সাধারণ ছুটির পর, তা আর নতুন করে বাড়ানো হয়নি। বুধবার থেকেই ঢাকা-সহ চার জেলায় সাত ঘণ্টার জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়েছে। চার ঘণ্টার জন্য খুলেছে অফিস-কাছারি। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুমতি পেয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এখনই খুলছে না বলে ‘বিবিসি বাংলা’কে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে চাইছে হাসিনার সরকার। তার পর পর্যায়ক্রমে খোলা হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অশান্তিতে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই দুশো ছাড়িয়েছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে জানা গিয়েছিল, মৃতের সংখ্যা ১৬৮। বৃহস্পতিবার সকালে ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ পরবর্তী সংঘাতে অন্তত ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং শীঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবে বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি থেকে পিছপা হচ্ছেন না, ফলে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ধরপাকড় জারি রয়েছে। গত ৮ দিন ৪ হাজারেরও বেশি গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংঘাত–সংঘর্ষের পর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বৈঠক করেছেন সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থার মাধ্যমে সারা দেশের মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বাংলাদেশে চলমান হিংসার নিন্দা করেছে এবং শান্তি ও আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।