আল-আমীন, ঢাকা: চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ মাস পেরিয়ে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো শুক্রবার বিকেলে। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে সনদে স্বাক্ষরের পর ড. ইউনূস বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা শুরু হলো। এই সনদ আমাদের নবজাত্রা — বর্বরতা থেকে সভ্যতার পথে আগামীর অঙ্গীকার।” তিনি আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর এত বৃহৎ জাতীয় ঐকমত্যের দলিল পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই সনদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। দক্ষিণ প্লাজা উৎসবমুখর পরিবেশে ভরে উঠলেও দুপুরের দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভে নামে জুলাই যোদ্ধারা। তারা সংসদ ভবনের ফটক টপকে প্লাজায় গিয়ে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে বলেন, “আপনাদের অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হবে। জুলাই সনদের পঞ্চম দফায় শহীদ ও আহতদের মর্যাদা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।”

তবু বিক্ষোভকারীরা না সরায়, পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিক্ষুব্ধরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়ে, যানবাহন ভাঙচুর করে এবং টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন, যাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে সংঘর্ষের মধ্যেও বিকেল পাঁচটায় নির্ধারিত সময়েই স্বাক্ষর হয় জুলাই জাতীয় সনদে।
এদিকে, সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন ও ইতিহাস উপস্থাপনে অসঙ্গতির অভিযোগ তুলে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ জাসদ সনদে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা করেন। এনসিপি ‘আইনি ভিত্তি অস্পষ্ট’ বলে অনুষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ায়।সব বিতর্ক, সংঘর্ষ ও মতভেদ পেছনে ফেলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ এখন বাংলাদেশের নবজাগরণের দলিল, যেমনটি বললেন ড. ইউনূস — “এই সনদ কেবল ঐক্যের প্রতীক নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সভ্যতার নবযাত্রা।”