বাংলাদেশের সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাই কোর্টের আগের রায় বাতিল করে, সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে কেবলমাত্র ৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে, আর বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে।
আদালতের রায় অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষণ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে তারা ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা পেতেন। বাকি ২ শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ অনগ্রসর শ্রেণি এবং অপর ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। আদালত আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে।
সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়, ২০১৮ সালে সংরক্ষণ নিয়ে নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্তে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে, হাই কোর্টের রায়কে ‘স্ববিরোধী’ বলে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তখন সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল।
২০১৮ সালে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ।
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ২০২১ সালে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হাই কোর্টে মামলা করে। হাই কোর্ট সেই রায়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পুরনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে। এরপর দেশজুড়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় এবং পুলিশ-ছাত্র সংঘর্ষে ১৫১ জনের মৃত্যু হয়।
এই পরিস্থিতিতে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হাই কোর্টের রায় খারিজ করে দেওয়া হয় এবং নতুন নির্দেশ অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়। সরকারকে দ্রুত এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।