ঢাকা থেকে আল-আমিন
ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যকে ভুয়ো বলে দাবি করলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট জানালেন, “ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে, তার অধিকাংশই বাস্তবে নেই। ফেসবুকে প্রকাশিত তালিকাটি সঠিক নয়।”
তৌহিদ হোসেন বলেন, “একজন উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া) তাঁর ফেসবুকে যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, সেটি পুরোপুরি ভুল। এই তালিকার অধিকাংশ চুক্তি বাস্তবে নেই। একটি চুক্তি খুব পুরোনো, কয়েকটি আবার পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে, তবে ঠিক ওই নামে নয়।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একে একে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি তথাকথিত ‘বাতিল চুক্তি’ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন,
“ত্রিপুরা–চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প বা অভয়পুর–আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ নামে কোনও প্রকল্প নেই। আশুগঞ্জ–আগরতলা করিডর নামেও কিছু নেই। যে প্রকল্পটি রয়েছে, সেটি হচ্ছে ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর–সরাইল–ধরখার–আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প’। এর একটি প্যাকেজই কেবল বাতিল হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “‘ফেনী নদী জল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ নামে কিছু নেই। যা আছে, সেটা কেবল একটি সমঝোতা স্মারক (MoU), সেটি বাতিল হয়নি। কুশিয়ারা নদীর জলবণ্টন প্রকল্পও আসলে কোনও চুক্তি নয়, সেটিও একটি সমঝোতা স্মারক এবং তা স্থগিত হয়নি।”
তৌহিদ হোসেন বলেন, “বন্দরের ব্যবহার সংক্রান্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি নামে কোনও চুক্তি নেই। যা আছে, সেটি হলো মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারত–বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের চুক্তি, যা এখনো কার্যকর রয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ফারাক্কা বাঁধ সংক্রান্ত কোনও প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা প্রস্তাব নেই। সিলেট–শিলচর সংযোগ প্রকল্পও বাস্তবে নেই। পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ চুক্তি নামে কোনও চুক্তি হয়নি।”
অর্থনৈতিক ও জ্বালানি খাতের প্রসঙ্গেও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল হয়নি, বরং প্রক্রিয়া চলছে। আদানি বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়টি মোটামুটি ঠিক আছে, তবে পুনর্বিবেচনার জন্য আলোচনা চলছে। গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে, সেটির নবায়নের জন্য আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়েও আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, যদিও অগ্রগতি ধীর।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানি জিআরএসই-এর সঙ্গে টাগবোট চুক্তি আমরা বাতিল করেছি। বিবেচনায় দেখা গেছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক নয়।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। রাজনৈতিক টানাপড়েন থাকলেও, উভয় দেশই প্রকাশ্যে জানিয়ে আসছে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক এবং জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও জোরদার করতে দুই পক্ষই কাজ করে যাচ্ছে।