বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা করবে সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়টির সরাসরি সম্প্রচারও হওয়ার কথা রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে এই মামলায় হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ড—চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনাল যে রায় দেবে, সেটাই চূড়ান্ত। পলাতক অবস্থায় থাকায় হাসিনা কোনওভাবেই আপিল করতে পারবেন না—আইনগত নিয়ম উল্লেখ করেই স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
তিন অভিযুক্ত, একজন রাজসাক্ষী
এই মামলায় মোট তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে—
- প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
- প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান প্রথম থেকেই পলাতক। সূত্রের খবর, দু’জনেই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তৃতীয় অভিযুক্ত আল-মামুনকে গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। পরে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগকে সমর্থন করেছেন।
কী কী অভিযোগ হাসিনার বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রপক্ষ মোট পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ এনেছে হাসিনার বিরুদ্ধে। সেগুলি হল—
১. জুলাই আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-যুব আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা—এমনটাই অভিযোগ। দেড় হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
২. উস্কানিমূলক ভাষণ
বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তব্যের ফলে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং জনমানসে ক্ষোভ বেড়েছিল বলেও অভিযোগ।
৩. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা
রংপুরে আন্দোলনরত ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা—দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচিত এই ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
৪. চানখাঁরপুলে ছ’জনকে গুলি করে হত্যা
ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও তাঁর নির্দেশের অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
৫. আশুলিয়ায় ছ’জনকে পুড়িয়ে হত্যা
গণআন্দোলন চলাকালীন ছয় জনকে পুড়িয়ে হত্যা করার নির্দেশও তাঁই দিয়েছিলেন—এমনটাই অভিযোগ।
কেন আপিল করতে পারবেন না হাসিনা
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাজি মোনাওয়ারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী:
- ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়।
- কিন্তু আপিল করতে হলে অভিযুক্তকে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে।
- শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক, দেশে নেই, পুলিশও তাঁকে হেফাজতে পায়নি।
- ফলে আইনের নিয়ম অনুযায়ী তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন না।
তিনি আরও জানান, বিদেশে থেকে গণমাধ্যমে হাসিনার দেওয়া সাক্ষাৎকার আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। সশরীরে উপস্থিত হলে তাঁর বক্তব্য গ্রহণ করা হত। তবে তাঁর কণ্ঠস্বরের রেকর্ড উন্মুক্ত আদালতে বাজানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
হাসিনার দাবি
দেশের বাইরে থেকে একাধিক সাক্ষাৎকারে হাসিনা দাবি করেছেন, তিনি কাউকে হত্যার নির্দেশ দেননি। তবে আইনজীবীদের মতে, পলাতক অবস্থায় এসব বক্তব্য রায়ের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলবে না।


