ঢাকা থেকে আল আমিন: দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে শুরু হওয়া এই আগুন প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালানোর পর রাত ৯টা ১৮ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিমানবন্দরের উত্তর দিকের কুরিয়ার ইউনিট এলাকা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে মূলত আমদানি করা পণ্য—বিশেষ করে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, ওষুধ, টেলিকম সরঞ্জাম এবং রাসায়নিক দ্রব্য—সংরক্ষিত ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও নৌবাহিনীর ইউনিটও।
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আগুন আংশিক নিয়ন্ত্রণে এলেও সম্পূর্ণ নেভাতে সময় লাগে আরও কয়েক ঘণ্টা। আগুনে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, প্রচুর পরিমাণে মূল্যবান পণ্য সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ভয়াবহতা
কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলেন, “দুপুর ২টা পর্যন্ত নিয়মিত কাজ চলছিল। তখন অনেক শ্রমিক ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়। শোনা যাচ্ছিল, সেখানে রাসায়নিক পদার্থ ও গোলাবারুদও ছিল, তাই বিস্ফোরণের আশঙ্কা ছিল।”
নিরাপত্তাকর্মী সোহেল জানান, “ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ৮ নম্বর ফটকে অনেকক্ষণ আটকে ছিল অনুমতিজনিত জটিলতায়, ফলে সময় নষ্ট হয়।”
আরেক নিরাপত্তারক্ষী আবির বলেন, “কার্গোর ৩ নম্বর গুদাম পুড়ে গেছে। ভয়াবহ আগুনে গার্মেন্টস পণ্য, ওষুধ, কেমিক্যাল, টেলিকম যন্ত্রপাতি—সব পুড়ে ছাই।”
প্রশাসনের পদক্ষেপ
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে একাধিক বাহিনী একসঙ্গে কাজ করেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিমান চলাচলে প্রভাব
আগুনের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে রাতেই ধীরে ধীরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
যানজটে নিকুঞ্জ-শাহজালাল সড়ক
আগুনের ধোঁয়া এবং জরুরি যানবাহনের চলাচলে নিকুঞ্জ থেকে বিমানবন্দরমুখী সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রমে দীর্ঘ সময় লাগে সাধারণ যানবাহনের।এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি, তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, এটি “স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড”।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের মধ্যে ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর, নতুন যাত্রার সূচনা বাংলাদেশের