Home খবর বাংলাদেশ ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পণ্য,...

ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পণ্য, পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কা

সাংবাদিক বৈঠকে আধিকারিকরা

ঢাকা থেকে আল-আমিন: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। শনিবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই অগ্নিকাণ্ডে তৈরি পোশাকের স্যাম্পল ছাড়াও পুড়ে গেছে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, কৃষিপণ্য ও অন্যান্য পচনশীল সামগ্রী

রবিবার সকাল পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।

রবিবার সকালে বিমানবন্দরে গেলে দেখা যায়, কার্গো ভিলেজের সামনে ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য ব্যবসায়ী। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের দাবি, আগুনে সব পণ্য পুড়ে যাওয়ায় তাঁরা পথে বসেছেন। রপ্তানির স্যাম্পল পুড়ে যাওয়ায় বিদেশি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কার্গো ভিলেজের সঙ্গে যুক্ত এক রপ্তানিকারক বলেন, “আমাদের পোশাকের স্যাম্পলই বিদেশি অর্ডার পাওয়ার চাবিকাঠি। সব পুড়ে গেছে। এখন নতুন করে স্যাম্পল তৈরি, পাঠানো, অনুমোদন নিতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে। বিদেশি অর্ডার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। শুরুতে সামান্য ধোঁয়া দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এলেও অনুমতির জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়, যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষায়, “যদি শুরুতেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতো, আধঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। কিন্তু অনুমতির দেরি সবকিছু পুড়িয়ে দিল।”

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, কার্গোর ভেতরে মিথেন গ্যাস থাকায় কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারা অক্সিজেনসহ সেফটি পোশাক পরে দুই দিক থেকে জল ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঢাকা কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, কৃষিপণ্য—সবই পুড়ে গেছে।”

সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ছুটির কারণে শুক্র ও শনিবার দু’দিনের মালামাল কার্গো ভিলেজে মজুত ছিল। ফলে, যেসব পণ্য এখনো হস্তান্তর করা হয়নি, সেগুলোও আগুনে পুড়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও রপ্তানি প্রক্রিয়া অন্তত এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ব্যবসায়িক মহল।
নতুন করে স্যাম্পল তৈরি, অনুমোদন এবং পাঠাতে সময় লাগবে, ফলে বিদেশি অর্ডার অন্য দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

রবিবার বিমানবন্দরের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ, এপিবিএন এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কার্গো এলাকা ঘিরে রাখেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধাক্কা

হাজারো ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে,  আর দেশের অন্যতম রাজস্ব উৎপাদন খাত পোশাক রপ্তানিতে পড়েছে অনিশ্চয়তার ছায়া।

আরও পড়ুন: ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন, ৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version