মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ইউনূস উল্লেখ করেন, হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ভারত সরকারের কাছে তার প্রত্যর্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হলেও এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ড. ইউনূস আরও জানান, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, “শুধু তাঁর (হাসিনা) নয়, তাঁর সঙ্গে জড়িত সকল লোক — তাঁর পরিবারের সদস্য, তাঁর ক্লায়েন্ট বা সহযোগীদেরও।”
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি তার শাসনামলে গোপন আটক কেন্দ্রগুলোর নেটওয়ার্ক তদারকি করতেন, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটত। এছাড়া, গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশকে ব্যবহার করে সহিংস দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, ওই সময়ে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন।
ড. ইউনূস সম্প্রতি ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন কারাগার পরিদর্শন করেছেন, যেখানে তিনি বন্দিদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখে মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বলেন, “এটিই সবচেয়ে কুৎসিত জিনিস যা আপনি দেখতে পারেন, আপনি অনুভব করতে পারেন বা আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।”
এদিকে, শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। বাংলাদেশে দুর্নীতির তদন্তে নাম আসার পর তিনি ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ড. ইউনূস জানান, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চলের’ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে, যেখানে সহিংসতা, মাদক এবং আধাসামরিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টের শুরুতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।