কাশ্মীরের পাহেলগাঁও-এ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত কঠোর প্রতিক্রিয়া জানালে পাল্টা উত্তেজক অবস্থান নেয় পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বৈঠকে পাকিস্তান ঘোষণা করেছে, ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং শিমলা চুক্তিকে স্থগিত রাখা হবে। একই সঙ্গে ইন্দাস জলচুক্তিকে “যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য” বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—আর্থিকভাবে কতটা প্রস্তুত পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য?
১. ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা
বর্তমানে পাকিস্তানের বহিঃঋণের পরিমাণ ১৩১.১ বিলিয়ন ডলার। আগামী চার বছরে এর মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে, যা একটি বিশাল আর্থিক চাপ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পাক অর্থ মন্ত্রকের তথ্যেই এই বিষয়টি উঠে এসেছে। পাকিস্তানের ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ মানে প্রায় ৮.৩ লাখ কোটি ভারতীয় টাকা সমমূল্যের ঋণ।
২. বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার তলানিতে
মার্চ ২০২৫-এর প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫২ মিলিয়ন ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ১১.০৯৮ বিলিয়ন ডলারে। এই রিজার্ভ দিয়ে খুব বেশি দিন আমদানি বা যুদ্ধকালীন খরচ চালানো সম্ভব নয়।
৩. IMF-এর উপর নির্ভরতা
অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ দিয়েছে IMF। কিন্তু IMF নিজেই জানিয়ে দিয়েছে যে পাকিস্তানের আর্থিক কাঠামো দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা স্থগিত
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই USAID সহ মার্কিন সাহায্য বন্ধ রয়েছে। সাময়িক স্থগিতাদেশ ২৬ এপ্রিল শেষ হলেও, পুনরায় চালু হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
৫. রাজনৈতিক অস্থিরতা
পাকিস্তানে কখনওই কোনো প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সামরিক হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে সরকার বারবার বদলেছে। এমন অস্থির পরিবেশ যুদ্ধের সময় আরও বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
যদিও কূটনৈতিকভাবে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে পাকিস্তান, কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। যুদ্ধ শুরু করলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, লগ্নি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আরও অর্থনৈতিক বিপর্যয় হতে পারে। সব মিলিয়ে, বর্তমানে পাকিস্তানের যুদ্ধ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই, বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।