নিউইয়র্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর আক্রমণ ও ব্যবসায়ী মহলের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও নিউইয়র্কের পরবর্তী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বামপন্থী রাজনীতিক জোহরান মামদানি। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন বলে বিভিন্ন সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে। এই নির্বাচন ছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় স্থানীয় রাজনৈতিক পরীক্ষাও।
৩৪ বছর বয়সি মামদানি নিউইয়র্কের কুইন্স অঞ্চলের অঙ্গরাজ্য-আইনপ্রণেতা এবং তিনি নিজেকে একজন ‘সমাজতান্ত্রিক’ হিসেবে পরিচয় দেন। জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, বিনামূল্যে শহরের বাসযাত্রা, শিশু পরিচর্যা এবং সরকার পরিচালিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ভোটারদের আস্থা অর্জন করেন। সহজ-সরল আচরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা এবং নির্বাচনী ময়দানে নেমে সকলের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে।
ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রাথমিক নির্বাচনে মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দেন। মেয়রপদে মূল নির্বাচনে কুয়োমো নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েছিলেন। তাঁকে আবার আবার পরাজিত করলেন মামদানি।
ব্রুকলিনের একটি ঐতিহ্যবাহী কনসার্ট ভেন্যুতে তাঁর সমর্থকদের আনন্দমুখর সমাবেশে ফল ঘোষণার পর উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিগগিরই ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে নবনির্বাচিত মেয়রের।

ছবি মামদানির ‘X’ থেকে নেওয়া।
মামদানির বিরুদ্ধে প্রচার কাজে এল না
মামদানির মুসলিম পরিচয় ও নীতির বিরুদ্ধে প্রচার চালান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নির্বাচনের আগের রাতে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে মামদানিকে ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন এবং লেখেন, “যে কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি জোহরান মামদানিকে ভোট দেয়, তবে সে একজন নির্বোধ!”
রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া, যিনি ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস সিটিজেন ক্রাইম পেট্রল গ্রুপ’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। অন্য দিকে কোটিপতি বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যান-সহ ধনীদের একটি অংশ মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারণায় অর্থ সহায়তা দেন।
এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা পর্যন্তই প্রায় ১৪.৫ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন, যা ২০২১ সালের নির্বাচনে যা ভোট পড়েছিল তার চেয়েও বেশি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির উত্থান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরকার ‘কেন্দ্রপন্থী বনাম বামপন্থী’ দ্বন্দ্বকে স্পষ্ট করেছে। সিরাকুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক গ্রান্ট রিহার মন্তব্য করেন, “নিউইয়র্ক শহর পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সব দিক থেকে আক্রমণ আসবে—এটি হবে মামদানির জন্য কঠিন লড়াই।”
ডেমোক্র্যাটদের আরও জয়
এ দিকে অন্যান্য রাজ্যেও ডেমোক্র্যাটদের সাফল্য দেখা গেছে। ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার রিপাবলিকান প্রার্থী উইমসন আর্ল-সিয়ার্সকে পরাজিত করেছেন। নিউ জার্সিতেও প্রাক্তন নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট মাইকি শেরিল রিপাবলিকান ব্যবসায়ী জ্যাক চিয়ারাতারেলিকে হারিয়ে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, আর ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থীদের সমর্থনে টেলি-র্যালির আয়োজন করেন।
এই ফলাফলকে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে রাজনৈতিক মেজাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে—যা আগামী বছরের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের কাছে শুভ লক্ষণ হতে পারে।
সূত্র: এএফপি/সংবাদ সংস্থা