মেঘ-কুয়াশার চাদরে মোড়া পাহাড়ি গ্রাম, সবুজ উপত্যকার বুকভরা পাখির কলরব—এ যেন প্রকৃতির আঁকা এক স্বপ্নচিত্র! কালিম্পং জেলার ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ঝান্ডি এখন সেই ছবিরই বাস্তব রূপ। সারা বছর জুড়েই এখানে চলে মেঘ আর কুয়াশার যুগলবন্দি। প্রকৃতির নিস্তব্ধতার মাঝে ক্রমে এই গ্রাম হয়ে উঠছে বিরল প্রজাতির পাখিদের স্বর্গরাজ্য।
সম্প্রতি ঝান্ডির জঙ্গলে দেখা গেছে এক বিরল প্রজাতির পাখি—রুফাস নেকড হর্নবিল (লালঘাড় ধনেশ)। শুধু তাই নয়, বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫০-র বেশি প্রজাতির পাখি বসবাস করছে বলে জানিয়েছে বনদফতর। এর মধ্যে রয়েছে স্কারলেট ফিঞ্চ, স্যাফায়ার ফ্লাই ক্যাচার, হিমালয়ান কিউটিয়া, রেড হেডেড ট্রোগন-এর মতো বিরল নামও।
বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “ঝান্ডিকে আমরা সংরক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপন যেন নষ্ট না হয়, সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”
বন দফতর স্পষ্ট জানিয়েছে—ঝান্ডিতে পর্যটনের বাণিজ্যিকীকরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। তাঁদের বার্তা, “আমরা চাই না ঝান্ডি লাটপাঞ্চারের মতো ভিড়ভাট্টার জায়গা হয়ে উঠুক। এখানে পাখিরা যেন শান্তিতে বাঁচতে পারে, সেটাই আসল উদ্দেশ্য।”
এই দর্শনকেই ভিত্তি করে এখন ঝান্ডি চলছে ‘Conservation by Isolation’ নীতিতে—অর্থাৎ, প্রকৃতিকে তার নিজের মতো থাকতে দেওয়াই সংরক্ষণের শ্রেষ্ঠ উপায়।
ঝান্ডির পাখিদের নিয়ে এখন গবেষণাও শুরু হয়েছে। বনকর্মীরা নিয়মিত নজর রাখছেন যেন বাইরের হস্তক্ষেপ না বাড়ে। পরিবেশপ্রেমী ও পাখিপ্রেমীদের কাছে ঝান্ডি ইতিমধ্যেই ‘বার্ড প্যারাডাইস অব কালিম্পং’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রকৃতি এখানে কথা বলে, বাতাসে মিশে থাকে পাহাড়ি সুর, আর গাছেদের ডালে ভেসে আসে অজস্র পাখির গান। তাই ঝান্ডিতে গেলে একটাই অনুরোধ— পাখিদের বিরক্ত না করে উপভোগ করুন তাদের স্বর্গরাজ্যের নিস্তব্ধ সৌন্দর্য।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us