Home খবর বিদেশ H1-B ভিসায় আমেরিকার নতুন নিয়ম: কী বলল ভারত, প্রভাব কোথায় পড়বে?

H1-B ভিসায় আমেরিকার নতুন নিয়ম: কী বলল ভারত, প্রভাব কোথায় পড়বে?

আমেরিকার নতুন H1-B ভিসা নিয়ম নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী, এর প্রভাব পড়বে কোন খাতে, আর পরিবারগুলির জন্য কী জটিলতা তৈরি হতে পারে—জানুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে।

H1 B visa

আমেরিকা সম্প্রতি H1-B ভিসা সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ভিসা মূলত দক্ষ বিদেশি পেশাদারদের জন্য, বিশেষ করে আইটি ও টেক সেক্টরে কর্মরতদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। নতুন নীতির ফলে ভিসার নিয়মাবলিতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যা ভারতীয় পেশাজীবী এবং তাঁদের পরিবারের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

নতুন পরিবর্তনগুলি কি কি?

  1. বছর প্রতি $১০০,০০০ ফি
    ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যেখানে বিদেশি কর্মীদের H1-B ভিসার জন্য প্রতি বছরের $১০০,০০০ ফি দিতে হবে, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে এসে কাজ শুরু করেন
  2. কোন ক্ষেত্রে ফি প্রযোজ্য হবে ও নয় তার কিছু ব্যতিক্রম
    • যদি আবেদনকারী ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকে, তাহলে হয়তো এই ফি লাগবে না
    • “ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট” (জাতীয় স্বার্থ) ক্ষেত্রে কিছু শিল্প, কোম্পানি বা পদের জন্য ফি-মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
    • এই নিয়ম ও ফি প্রযোজ্য হবে নতুন H1-B আবেদনগুলিতে যা সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫ তারিখের পর থেকে ফাইল হবে।
  3. কাজ ও অপারেশনগুলোর প্রভাব
    • ভারতীয় IT কোম্পানিগুলো বলেছে এই নতুন ফি ও পরিবর্তন তাঁদের অর্থনৈতিক খরচ বাড়াবে এবং কিছু অন‐শোর চুক্তিতে তথা কাজের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।
    • কিছু বড় কোম্পানি তাদের H1-B ভিসাধারী কর্মচারীদের যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুতভাবে ফিরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে যাতে তারা নতুন নিয়মে পড়ে না।
  4. ভিসা আবেদন ও সাক্ষাৎকার পন্থায় পরিবর্তন
    • ২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে বেশিরভাগ নন-ইমিগ্রেন্ট ভিসার জন্য (H1-B সহ) মুখোমুখি সাক্ষাৎকার (in-person interview) বাধ্যতামূলক হতে পারে, যেখানে পূর্বে কিছু ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার ছাড় দেওয়ার সুযোগ ছিল।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পূর্ণ প্রভাব এখনও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে—

  • ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক মূলত প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর দাঁড়িয়ে।
  • দক্ষ জনশক্তির চলাচল দুই দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।
  • আশা করা হচ্ছে, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুই দেশ পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান খুঁজবে।

বিদেশ মন্ত্রক সতর্ক করেছে, নতুন নিয়ম পরিবারগুলির জন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। ভারত আশা করছে, আমেরিকার কর্তৃপক্ষ সেই সমস্যার যথাযথ সমাধান করবে।

কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবেন?

  1. ভারতীয় আইটি পেশাজীবী:
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ H1-B ভিসার উপর নির্ভরশীল। নতুন নিয়মে তাদের কাজের ভিসা বাড়ানো বা নবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
  2. পরিবারের সদস্যরা:
    H4 ভিসায় থাকা স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। তাঁদের শিক্ষার সুযোগ বা কাজ করার অনুমতিতে সীমাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
  3. ভারতীয় আইটি ইন্ডাস্ট্রি:
    টেক কোম্পানিগুলির কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কারণ মার্কিন প্রকল্পে ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কেন H1-B ভিসা এত গুরুত্বপূর্ণ?

  • প্রতি বছর প্রায় ৭০% H1-B ভিসা ভারতীয়দের দেওয়া হয়।
  • এই ভিসার মাধ্যমে ভারতীয়রা শুধু আমেরিকার টেক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন না, বরং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সেতু গড়ে ওঠে।
  • ভারতীয় আইটি রপ্তানির বড় অংশ নির্ভর করে মার্কিন বাজারে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহের উপর।

ভারতের বার্তা

ভারত স্পষ্ট করেছে—

  • উভয় দেশের শিল্পক্ষেত্রের শক্তি নিহিত উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতায়।
  • এই সিদ্ধান্ত যেন দুই দেশের দৃঢ় সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
  • সমাধান খুঁজতে নীতি নির্ধারকরা ইতিবাচক আলোচনায় বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

আমেরিকার H1-B ভিসা নীতি পরিবর্তন ভারতীয় পরিবার, পেশাজীবী এবং আইটি শিল্পের জন্য উদ্বেগের কারণ হলেও ভারত সরকার আশাবাদী যে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version