কলম্বো: প্রাথমিক গণনার ইঙ্গিতই শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হল। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েকে জয়ী হলেন। বামপন্থী জোট পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (জেভিপি)-এর নেতা দিশানায়েকে ৪২.৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা ৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
অন্যদিকে, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে মাত্র ১৭.২৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসা ৩২.৭৬ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী আলি সাব্রি জানিয়েছেন, “ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট যে, দিশানায়েকেই জয়ী হয়েছেন।”
পাঁচ বছর আগে, ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন বামজোট মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট, ২০২২ সালে দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ এবং রাজাপক্ষে সরকারের পতনের পর দেশবাসীর মনোভাব বদলে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল না হওয়ায় দিশানায়েককে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছে জনগণ।
প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ভোটার শনিবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথম পছন্দের ভোটে ৪৯ শতাংশ পেয়ে এগিয়ে ছিলেন দিশানায়েকে, তবে প্রথম পছন্দের ভোটে ৫০ শতাংশের কম হওয়ায় দ্বিতীয় পছন্দের ভোটগণনা হয়, যেখানে তিনি প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে যান।
সমাজমাধ্যমে দিশানায়েকে তাঁর জয়ের ইঙ্গিত দিয়ে লেখেন, “এই বিজয় আমাদের সকলের।” জানা গিয়েছে, সোমবারই কলম্বোর প্রেসিডেন্ট আবাসে শপথ নেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট অনুরাকুমার দিশানায়েকে।

দিশানায়েকের রাজনৈতিক যাত্রাপথ
অনুরা কুমারা দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (JVP) এবং ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (NPP) জোটের নেতা। তিনি একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ, যিনি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারবাহিক ভাবে অবস্থান নিয়েছেন।
দিশানায়েকে দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় এবং দেশের প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৩% ভোট পেলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিশাল সমর্থন অর্জন করলেন, যা দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
ආණ්ඩුව පන්නමු! පාරට බහිමු! උද්ඝෝෂණ පෙළපාලිය – අනුරාධපුර pic.twitter.com/lc7qoJG37A
— Anura Kumara Dissanayake (@anuradisanayake) June 27, 2022
দিশানায়েকের নীতি মূলত বামপন্থী আদর্শের উপর ভিত্তি করে, যেখানে তিনি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোর দিয়ে থাকেন। তিনি শ্রীলঙ্কার ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাস, কর সংস্কার, এবং সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা কমানোর জন্য প্রচার চালান। দিশানায়েকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর কঠোর শর্তের সমালোচনা করেন এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং খাদ্যখাতে মূল্য সংযোজন কর (VAT) কমানোর দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন। প্রশ্ন হল, বামপন্থী নীতিগত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে তিনি কি ফেরাতে পারবেন দেশের হাল? এখন সেটাই দেখার।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

