খবরঅনলাইন ডেস্ক: যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার উপকূল অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল ‘ড্যানিয়েল’ ঝড়ের তাণ্ডবে। মনে করিয়ে দিল হারিকেন ‘ক্যাটরিনা’ তাণ্ডবের কথা। ‘ড্যানিয়েল’-এর কবলে পড়ে প্রাণ হারালেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। উপকূল-শহর ডেরনা ও তার আশপাশের অঞ্চল একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই খবর দিয়েছে।
‘ড্যানিয়েল’ ঝড়ের দাপটে অবিরাম বৃষ্টি হয়ে চলেছে। ডেরনার কাছাকাছি দুটি বাঁধ ভেঙে গিয়ে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে। তলিয়ে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও মানুষ।
অবস্থা সঙ্গিন লিবিয়ার
ভূমধ্য সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়া ঝড় মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি নেই উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার। দুটি যুযুধান সরকার এই দেশ চালায়। ফলে ঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার ব্যাপারে চলছে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। দুর্দশাগ্রস্তদের উদ্ধার করা এবং তাদের সাহায্য করার ব্যাপারে চলছে চূড়ান্ত অনিয়ম। অথচ এই দেশে রয়েছে বিপুল তেলের ভাণ্ডার। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে সেই ভাণ্ডার সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।
যে সরকার লিবিয়ার পূর্বাংশ দেখাশোনা সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারেক আল খারাজ জানিয়েছেন, একমাত্র ডেরনা শহরেই অন্তত ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। এই খবর দিয়েছে লিবিয়ান টেলিভিশন স্টেশন আল-মাসার। তবে বন্যার জল ভাসিয়ে দিয়েছে পূর্ব লিবিয়ার শাহহত, আল-বেদা এবং মার্জ প্রভৃতি অঞ্চল। ফলে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গৃহহারা হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আগামী দিনের মৃতের সংখ্যা যে অনেক বাড়বে, তা নিঃসংশয়ে বলা যায়। শহরের জলমগ্ন রাস্তাগুলিতে মৃতদেহ ভাসছে, বাড়ি ভেঙে পড়েছে, গাড়ি সম্পূর্ণ জলের তলায়। রাস্তা এমন ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যে প্লাবিত এলাকায় পৌঁছোনোই যাচ্ছে না। “ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও আমরা বুঝতে পাচ্ছি না”, বললেন ২৮ বছরের তুরস্কবাসী জওহর আলি, যাঁর আদত বাড়ি ডেরনা শহরে। তিনি বলেন, দু’রাত তাঁর কোনো ঘুম নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। পরিবারের সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগই করতে পারছেন না।
ভুমিকম্পের পরেই এই ঝড়-বন্যা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, পরিবেশগত অধঃপতন এবং জীর্ণ পরিকাঠামো – সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই উত্তর আফ্রিকার আর-এক দেশ মরক্কো ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হল। প্রাণ গেল প্রায় ৩ হাজার মানুষের। তছনছ হয়ে গেল বেশ কিছু শহর। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ধুলোয় মিশে গেল। এর পর এই লিবিয়ায় ঘটল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রাথমিক হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। আরও কত বাড়ে সেটাই দেখার।