১৫ আগস্ট আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন জয়েন্ট বেস-এ প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে মুখোমুখি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈঠক শেষে উভয় নেতা আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ এবং ‘গঠনমূলক’ বলে বর্ণনা করলেও,বাস্তবে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান এখনও অধরাই থেকে গেল।
এক মার্কিন সংবাদমাধ্যকে তিনি জানিয়েছেন, বাকি সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপর নির্ভর করছে। পুতিনের সঙ্গে বৈঠক পরবর্তী পদক্ষেপ তাই ঠিক করতে হবে। সেই বৈঠকে ট্রাম্পও থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমাদের বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে, অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। তবে কয়েকটি বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে। আমরা এখনও চুক্তিতে পৌঁছইনি, তবে শিগগিরই পৌঁছতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”
ইউক্রেনকে বাদ দেওয়ায় বিতর্ক
এই বৈঠকে ইউক্রেনকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সবাই যুদ্ধের সৎ সমাপ্তি চায়। তবে ইউক্রেনকে বাইরে রেখে যে কোনও আলোচনাই ভুয়ো শান্তি পদক্ষেপ।” আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এই পদক্ষেপকে কিয়েভের প্রতি চাপ সৃষ্টি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পুতিনের অবস্থান
বৈঠকের পর পুতিন জানালেন, রাশিয়া “আন্তরিকভাবে যুদ্ধের ইতি টানতে আগ্রহী।” তবে পশ্চিমের দেশগুলি সামরিক সহায়তা বন্ধ করার দাবিই রাশিয়ার প্রধান শর্ত। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলিকে সতর্ক করে বলেন, “অগ্রগতির পথে বাধা দেবেন না।”
মার্কিন কূটনীতির বদলে যাওয়া চেহারা
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ২০১৮ সালের হেলসিঙ্কি বৈঠকের তুলনায় এবার ট্রাম্প অনেকটা সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিলেও, পুতিনের সঙ্গে একসঙ্গে প্রেসিডেন্টের বিশেষ গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’-এ যাত্রা আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
চিন প্রসঙ্গ: বাণিজ্য যুদ্ধের ইঙ্গিত
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, চিনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বিবেচনায় রয়েছে। তবে তা “তাৎক্ষণিকভাবে নয়, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে” হতে পারে বলে বলেন তিনি। এর ফলে আমেরিকা-চিন বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত
- ভূ-রাজনৈতিক বার্তা: বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনকে বাদ রেখে এই বৈঠক ট্রাম্পের কূটনীতির নতুন দিক নির্দেশ করছে। এর ফলে ইউরোপ এবং ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হতে পারে।
- কিয়েভের ভবিষ্যৎ: ইউক্রেনকে আলোচনার বাইরে রাখা হলে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার পক্ষে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে আশঙ্কা।
- চিনের প্রভাব: শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি আসলে ওয়াশিংটনের কৌশলগত বার্তা—রাশিয়া নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ট্রাম্প এশিয়াতেও শক্ত অবস্থান নিতে চাইছেন।
সামনে কী?
যুদ্ধবিরতির কোনও দৃঢ় রূপরেখা পাওয়া যায়নি। পুতিনের দাবি অনুযায়ী পশ্চিমের দেশগুলি অস্ত্র সহায়তা বন্ধ না হলে রাশিয়া পিছু হটবে না। অন্যদিকে ট্রাম্প দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও কিয়েভকে বাদ রেখে তিনি কতটা কার্যকর সমাধান আনতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান আন্তর্জাতিক মহল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক একটি অস্থায়ী সমঝোতার ছবি তৈরি করেছে, কিন্তু বাস্তবে ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও দীর্ঘ হতে পারে।
আরও পড়ুন: