ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের হামলায় তেল আভিভে ক্ষতিগ্রস্ত হল আমেরিকার দূতাবাস। এই ঘটনা এখন গোটা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ, চলমান ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের মধ্যে এই প্রথম কোনও মার্কিন কূটনৈতিক স্থাপনায় আঘাত হানল তেহরান। প্রশ্ন উঠছে— এই হামলা কি আমেরিকাকে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে আনবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইরানের ‘সবচেয়ে বড় ভুল’ হতে পারে।
কি ঘটেছিল?
রবিবার রাতে ইরান একযোগে ৬৫টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে মধ্য ইজরায়েলের উপর হামলা চালায়। তেল আভিভ-সহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মার্কিন দূতাবাস ভবন। যদিও কোনও প্রাণহানি হয়নি, তবে জানালার কাচ ভাঙা, কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং কর্মীদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট দূতাবাস বন্ধ করে কর্মীদের ‘shelter in place’ নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে জি৭ সম্মেলনের জন্য সফরসূচি কাটছাঁট করে আগেই দেশে ফিরে যাচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কেন এটা গুরুতর?
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি দেশের দূতাবাস সেই দেশের অংশ বলেই বিবেচিত হয়। সেই অর্থে ইরান কার্যত মার্কিন ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এটি কেবল ইজরায়েল নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
আমেরিকার প্রতিক্রিয়া কী?
হোয়াইট হাউসের তরফে এখনও পর্যন্ত সরাসরি যুদ্ধঘোষণা না হলেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করছে। পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র CNN-কে জানান, “আমরা এই আঘাতকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। প্রয়োজন হলে প্রতিক্রিয়া হবে যথাযথ ও শক্তিশালী।”
ইরানের ভুল কৌশল?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমেরিকাকে সরাসরি না টেনেও ইজরায়েলের সঙ্গে লড়াই চালানো ছিল ইরানের কৌশল। কিন্তু দূতাবাসে আঘাত হানার মধ্য দিয়ে তারা যে সীমা লঙ্ঘন করেছে, তাতে ওয়াশিংটনের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। ২০০১ সালের ৯/১১-র পর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক এবং সামরিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় কীভাবে প্রতিহত করেছিল, তা ইতিহাসে রয়েছে।
যুদ্ধ কি অনিবার্য?
বর্তমানে ইরান, ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র— এই তিন শক্তির মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনার মুখে। ইজরায়েল আগেই যুদ্ধ জারি রেখেছে। এখন যদি আমেরিকা সরাসরি প্রবেশ করে, তা হলে একটি পূর্ণমাত্রার পশ্চিম এশীয় যুদ্ধ শুরু হওয়া খুব একটা অসম্ভব নয়। এই সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য রাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়া ও চিনেরও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।