Home অনুষ্ঠান কিছু ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ও সংগঠনকে সংবর্ধিত করল ‘স্পর্শ’ তাদের একাদশ বর্ষপূর্তি ‘হর্ষ’...

কিছু ব্যতিক্রমী ব্যক্তি ও সংগঠনকে সংবর্ধিত করল ‘স্পর্শ’ তাদের একাদশ বর্ষপূর্তি ‘হর্ষ’ অনুষ্ঠানে

0
‘স্পর্শ’র তরফ থেকে রামকৃষ্ণ অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুজোর পোশাক। একেবারে ডানদিকে রয়েছেন ‘স্পর্শ’-র সাধারণ সম্পাদক তাপস দে।

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেখতে দেখতে কেটে গেল একটা বছর। চলে এল বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। আর পুজো এলেই তার আগে চলে আসে ‘স্পর্শ’র বার্ষিক হর্ষ অনুষ্ঠান। এবারেও তার অন্যথা হল না।

কেমন একটা অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার রেশ আমাদের এখনও আলোড়িত করছে। সেই ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে, সুপ্রিম কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া জারি। ৪২ দিন কর্মবিরতির পর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কাজে ফিরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি আবার সামনে চলে আসায় ফের কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

এরকমই মন খারাপ করা খবর চারিদিকে। কিন্তু এর মধ্যে ভালো খবরও তো কিছু থাকে। কিন্তু মন খারাপ করা খবরের ভিড়ে সেই ভালো খবরগুলো হারিয়ে যায়। কিন্তু মধ্য কলকাতা ‘স্পর্শ’ সেই ভালো খবরগুলো খুঁজে বার করে। আর শুধু খুঁজে বারই করে না, সেই খবর যাঁরা সৃষ্টি করেন তাঁদের নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। যে সব ব্যাক্তি বা সংগঠন মানুষের সেবার কাজে সদাসর্বদা নিয়োজিত কিংবা একটা লক্ষ্য পূরণের কাজে সদা ব্যাপৃত, তাঁদের সম্মানিত করে ‘স্পর্শ’ তাদের হর্ষ অনুষ্ঠানে। সম্প্রতি সুবর্ণবণিক হলে আয়োজিত হয়েছিল ‘স্পর্শ’র একাদশ বর্ষপূর্তির হর্ষ অনুষ্ঠান। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং সেজুতি বসুর উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।      

প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হল।

প্রথমেই সংবর্ধনা দেওয়া হল ৭৯ বছরের প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকা অণিমা হালদারকে। কালনার বাদাগাছি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন অণিমা। রোজ হেঁটে স্কুলে যেতেন। যাতায়াতে ৪ কিমি পথ। কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রৌঢ়দের খেলাধূলার প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে শুরু করেন। এভাবেই পৌঁছে যান সিঙ্গাপুরে প্রৌঢ় অ্যাথলেটদের আন্তর্জাতিক মাস্টার্স প্রতিযোগিতায়। ২০২২-এ আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় ৩ কিমি ম্যারাথন হাঁটা ও ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতেন অণিমা। এখন তাঁর বাড়ি সবসময়ই ভরে থাকে শিশু-কিশোরদের ভিড়ে। পড়াশোনার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের খেলাধুলোতেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সংবর্ধিত হলেন মন্দিরা আচার্য। দুটি চোখেই দৃষ্টি খুব কম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কৃষ্ণনগরের মন্দিরা আজ হয়ে উঠেছেন প্রকৃত অর্থেই ‘মা’। এসএসসি পাশ করার পর নিজে যেচে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষিকার চাকরি বেছে নিয়েছেন। প্রায় আড়াইশো শিশুর ভার নিয়েছেন। স্কুলের পরে চলে যান আদিবাসী গ্রামে। সেখানেই তাদের পড়ান। প্রতিদিন সকালে বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান। কৃষ্ণনগর স্টেশনে অভুক্ত মানুষদের খাওয়ান মন্দিরা। এভাবেই প্রতিদিন ২০-২৫ জন সবহারা মানুষকে রান্না করে খাওয়ান তিনি।

সংবর্ধনা দেওয়া হল অণিমা হালদারকে।

ডান পায়ের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলেছেন রিমো সাহা। ন্যাশনাল প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতায় ৪৮টি সোনা, ৩৭টি রুপো এবং ১৭টি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন তিনি। এ ছাড়াও ওপেন ওয়াটার সি সুইমং-এ ১৬টা সোনা জিতেছেন। ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পেরিয়েছেন। এ ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেসে ক্যাটালিনা চ্যানেল, দক্ষিণ আফ্রিকার রবেন আইল্যান্ড, পোল্যান্ডের গালফ্‌ অফ ডান্সক চ্যানেল ইত্যাদি পেরিয়েছেন তিনি। ‘স্পর্শ’ তাঁকেও সংবর্ধনা জানাল।  

সংবর্ধিত করা হল লালগোলার রক্তযোদ্ধাদের। ২০১৬ থেকে মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে এঁদের পথচলা শুরু। আজ পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি রোগীকে রক্ত দিয়েছেন এঁরা।

সংবর্ধনা দেওয়া হল অবিভক্ত ২৪ পরগণার প্রথম মাউন্টেনিয়ারিং এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ক্লাব ‘সোনারপুর আরোহী’কে। এভারেস্ট–কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহাদেশের ‘সেভেন সামিট’-সহ ৮৫টি পর্বত জয় করেছেন। ট্রান্স হিমালয়ের দীর্ঘ পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন। পর্বতারোহণের পাশাপাশি এঁরা শৈলারোহণ প্রশিক্ষণ শিবির, সামার অ্যাডভেঞ্চার ট্রেকও আয়োজন করেন। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পরিবেশ বাঁচানোর কাজ করে চলেছেন।

দুঃস্থ মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুজোর শাড়ি।

প্রতি বছর ‘স্পর্শ’ যেভাবে এই বিরল মানুষগুলিকে প্রকাশ্য মঞ্চে এনে সংবর্ধিত করে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার জন্য তাঁরা ‘স্পর্শ’-র কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক তাপস দে-কে ধন্যবাদ জানান এবং সংগঠনের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন।

এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ওইদিন ১২৪ বছরের পুরোনো রামকৃষ্ণ অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুজোর পোশাক। মধ্য কলকাতার বহু দুঃস্থ মহিলার হাতে দেওয়া হয় পুজোর শাড়ি। যাঁরা প্রকাশ্যে দান নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন, ‘স্পর্শ’-এর তরফ থেকে তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পুজোর শাড়ি। এ ছাড়াও আদিবাসী মেয়েদের হাতেও দেওয়া হয় পুজোর পোশাক। ‘স্পর্শ’-র তরফ থেকে এই পোশাক তুলে দেন সুমা চট্টোপাধ্যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন মৌসুমী সরকার।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version